প্রতিনিধি যশোর
![]() |
একবার ব্যবহারের উপযোগী কাপের আকারভেদে আইসক্রিমটি ১০ ও ২০ টাকায় বিক্রি হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সাধারণ নিয়মে শুধু দুধ-চিনি মিশিয়ে হাতে তৈরি আইসক্রিম বানানো শুরু করেন বিশ্বনাথ পাল (৪৬)। এগুলোর তেমন বিক্রি হতো না। এতে কিছুটা হতাশ হন তিনি। তবে থেমে যাননি তাঁর স্ত্রী কাকলি পাল (৩০)। পরিকল্পনা করেন, এসব উপকরণের সঙ্গে যোগ করবেন কাজুবাদাম, কিশমিশ, সন্দেশ আর দুধের সর।
এতেই কাজ হলো। স্বাদের কারণে হু হু করে বাড়তে থাকল তাঁদের বানানো আইসক্রিমের বিক্রি। একসময় যশোরের কেশবপুর উপজেলায় জনপ্রিয়তা পায় আইসক্রিমটি। বর্তমানে এর খ্যাতি কেশবপুরের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।
বিশ্বনাথ পাল ও কাকলি পাল দম্পতির বসবাস কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া বাজারে।
বিশ্বনাথ বলেন, প্রায় ২৬ বছর আগে বাড়ির সামনে একটি ছাপরা দোকান দেন। সেখানে বিভিন্ন কোম্পানির আইসক্রিম বিক্রি করতেন। প্রায়ই কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাঁকে আইসক্রিম দিতে চাইতেন না। তখন থেকে জেদ করেন, নিজেই আইসক্রিম বানিয়ে বিক্রি করবেন। সে–ই শুরু। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর স্ত্রী কাকলির রেসিপি অনুসরণ করে আইসক্রিম তৈরি করে ভালো ফল পেয়েছেন। সেটিকে বেশ সুস্বাদু বলে স্বীকৃতিও দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে। বর্তমানে পাঁজিয়া বাজারের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাঁদের আইসক্রিমের দোকানটির অবস্থান। অনেকের কাছে এখন সেটি ‘বউদির আইসক্রিম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
প্রথমে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা এ আইসক্রিম খেয়ে ভালো বলত। তারপর ধীরে ধীরে এর সুখ্যাতি ছড়াতে থাকে। নিয়মিতই এ আইসক্রিম কিনে খায় পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র তানভীর হাসান সিজন ও নবম শ্রেণির ছাত্র মন্দিরা হালদার। তারা জানায়, বিদ্যালয়ে এলে তারা আইসক্রিমটি খায়। আইসক্রিমটি খেতে খুবই মজা। এর স্বাদের কাছে হার মেনে যায় যেকোনো ব্র্যান্ডের আইসক্রিম।
এখন দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন এলাকার লোকজন আইসক্রিমটির স্বাদ নিতে দোকানটিতে আসেন। ফলে সেখানে ভিড় লেগেই থাকে। এটিকে স্থানীয় ঐতিহ্য উল্লেখ করে পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল ব্যানার্জি বলেন, পাঁজিয়ার রসগোল্লার খ্যাতি যেমন দেশ-বিদেশজুড়ে, তেমনি বউদির আইসক্রিমও পাঁজিয়ার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
![]() |
যশোরের কেশবপুরে নিজেদের তৈরি আইসক্রিম দেখাচ্ছেন বিশ্বনাথ পাল ও কাকলি পাল দম্পতি। গত সোমবার উপজেলার পাঁজিয়া গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
দোকানের জন্য আইসক্রিম তৈরিতে বর্তমানে প্রতিদিন ৩০ কেজি থেকে ১ মণ দুধের প্রয়োজন হয়। কাকলি পাল বলেন, প্রথমে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা ধরে এসব দুধ জ্বাল দিয়ে পরিমাণে প্রায় অর্ধেকে আনা হয়। এরপর এতে চিনি যোগ করে ঘনত্ব আরও বাড়ানো হয়। তারপর সন্দেশ, কাজুবাদাম, দুধের সর, কিশমিশ মিশিয়ে আবার জ্বাল দেওয়া হয়। মূলত এ কাজ করা হয় সকালের দিকে। এরপর পুরো ঠান্ডা হয়ে এলে সন্ধ্যার দিকে মিশ্রণটি একবার ব্যবহারের উপযোগী কাপে (ওয়ান টাইম কাপে) ঢালা হয়। শেষে ফ্রিজে রেখে দিয়ে সকালে বিক্রির জন্য দোকানে নেওয়া হয় এসব আইসক্রিম।
একবার ব্যবহারের উপযোগী কাপের আকারভেদে আইসক্রিমটি ১০ ও ২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে শুরুর দিকে এগুলোর দাম ছিল ২ ও ৫ টাকা। প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আইসক্রিমের দামও বাড়ানো হয়েছে দাবি করে বিশ্বনাথ বলেন, প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০টি আইসক্রিম বিক্রি করেন। প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার টাকার বিক্রি হয়। আনুষঙ্গিক খরচ বাদে দু-তিন হাজার টাকা লাভ থাকে। তবে দুধসহ আইসক্রিম তৈরির অন্য উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমে আসছে।
বিশ্বনাথ ও কাকলি দম্পতি এ আইসক্রিম বানাতে কোনো ধরনের যন্ত্রপাতির ব্যবহার করেন না। স্বল্প পরিসরে সম্পূর্ণভাবে নিজ হাতে তৈরি করেন বলেই এগুলোর স্বাদ ও মান অক্ষুণ্ন থাকে বলে দাবি তাঁদের। তাঁরা জানালেন, দুই ঈদের সময় এ আইসক্রিমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। তখন কষ্ট বেশি হলেও আইসক্রিম তৈরি করতে ভালোই লাগে। এ ছাড়া অনেকেই পাইকারি দরে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও আপাতত তাঁরা নিজেরাই এ আইসক্রিম বেচতে চান।