প্রতিনিধি রাজবাড়ী

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় বিক্ষুব্ধ লোকজনের হামলায় আহত পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। গতকাল রাতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজবাড়ীতে চুরির অভিযোগে শাহিন শেখ ওরফে রুপল শেখ (২৭) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন শেষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কর্মসূচি শেষে এক আসামির বাড়িতে হামলা চালান বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে বাধা দিলে গতকাল রোববার বিকেলে সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) সাব্বির হোসেন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শেখ আবুল হাশেম। তাঁদের রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এ ঘটনায় রাতেই এসআই সাব্বির হোসেন বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় গতকাল রাতে মনির হোসেন মোল্লা ও মোসলেম মোল্লা নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, কয়েক দিন আগে রাজাপুর এলাকার মধ্যপাড়া গ্রামের শামসুদ্দিন বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তির পানির পাম্প চুরি হয়। এতে সন্দেহ করা হয় একই এলাকার দিনমজুর শাহিন শেখকে। গত শুক্রবার সন্ধ্যার আগে সালিসের কথা বলে কয়েকজন শাহিনকে ডেকে শামসুদ্দিনের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে শামসুদ্দিন ও জহির উদ্দিন বিশ্বাসের নির্দেশে ১৫ থেকে ২০ জন মিলে শাহিনকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটান। এ সময় তাঁর দুই পায়ে আঘাত করা হয়। একপর্যায়ে শাহিন অচেতন হয়ে পড়লে সবাই পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন শাহিনকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ রাত পৌনে ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরদিন সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। রাতে শাহিনের মামা কালাম মোল্লা বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন। স্থানীয় কয়েকজন জানান, চুরির অভিযোগের পাশাপাশি এক নারীর গোসলের ভিডিও ধারণের কারণেই শাহিনকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়েছিল।

এদিকে শাহিন হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল বিকেল চারটার দিকে এলাকাবাসীর ব্যানারে রাজাপুরে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ লোকজন শাহিন হত্যা মামলার আসামি মোক্তার বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেন সদর থানার এসআই সাব্বির হোসেন ও এএসআই আবুল হাশেম। এ সময় হামলাকারীরা লোহার রড ও ইট দিয়ে দুই পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সেই সঙ্গে আহত দুই পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান জানান, শাহিন হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি শামসুদ্দিন ও জহির উদ্দিনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায়ও মামলা হয়েছে।