প্রতিনিধি রাজবাড়ী
![]() |
রাজবাড়ীর পাংশার প্রশান্ত কুমার দাসের খামারে ১ হাজার ৪৭০ কেজি ওজনের বিশাল এই ষাঁড়টির নাম প্রিন্স বা সাদা পাহাড়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রামকোল বাহাদুরপুর গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
‘শরীরজুড়ে সাদা রং, সঙ্গে হালকা একটু করে সোনালি আভা। গোসল করার প্রয়োজন হলে, ক্ষুধা লাগলে, কখনো আকাশে মেঘ জমলে ডাকাডাকি করতে থাকে। ওর ডাকাডাকিতে আমরা অনেক কিছুই বুঝতে পারি। পরিস্থিতি দেখে বুঝে নিই, আমাদের প্রিন্স বা সাদা পাহাড়ের কোনো সমস্যা হয়েছে কি না বা কী বোঝাতে চাইছে।’
নিজের পালন করা প্রায় ১ হাজার ৪৫০ কেজি বা প্রায় ৩৮ মণ ওজনের ষাঁড়টির সম্পর্কে এর মালিক প্রশান্ত কুমার দাস কথাগুলো বলছিলেন। রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার এই খামারি ষাঁড়টি আসন্ন কোরবানির ঈদে উপলক্ষে বিক্রির ডাক তুলেছেন।
পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের রামকোল বাহাদুরপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে প্রশান্ত কুমার গড়ে তুলেছেন ‘ভাই ভাই ডেইরি খামার’। রাজবাড়ী শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে এই খামার। খামারে ছোট-বড় ৩৪টি গরুর মধ্যে ৪টি গাভি, বাকি সবই ষাঁড়। খামারে তিনটি গরুর জায়গা একাই জুড়ে আছে বিশাল দেহের অধিকারী ‘সাদা পাহাড়’। মাথার ওপর বসানো রয়েছে দুটি সিলিং ফ্যান। খামারে উন্নত জাতের ছাগলের মধ্যে অনেক বড় দুটি খাসিও রয়েছে, যার একেকটির ওজন প্রায় ৪৫ কেজি। দুজন কর্মচারীর সঙ্গে প্রশান্ত ও তাঁর স্ত্রী ভরতী রানী এসব গরু-ছাগলের তদারক করেন।
প্রশান্ত কুমার দাস বলেন, ২০২২ সালের মার্চ মাসে বাড়ির পেছনে এই খামার করেন। তাঁর খামারের সবচেয়ে বড় ষাঁড়টির নাম সাদা পাহাড়। কুষ্টিয়ার বালিয়াপাড়া হাটে বিক্রি করতে আসা চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ষাঁড়টি কেনেন তিনি। সঙ্গে আরও চারটি বাছুর কেনেন। অল্প দিন বাদেই বাড়ির সবাই ষাঁড়টির মায়ায় পড়ে যান। তিন বছরে বিশাল দেহের অধিকারী হয়েছে ষাঁড়টি।
খামারের কর্মচারী কালাম প্রামাণিক সাদা পাহাড় সম্পর্কে বলেন, ‘আমার জীবনে এত বড় গরু আগে দেখিনি। প্রতিদিন তিন থেকে চারবার গোসল করাতে হয়। সকাল আটটা, বেলা দুইটা থেকে আড়াইটা এবং সন্ধ্যায় খাবার দিই। খাবারে গমের ছাল, চালের গুঁড়া, খড়, খৈল, খেসারি, ছোলা ও কাঁচা ঘাস দিই। গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকার খাবার লাগে।’
![]() |
প্রশান্ত কুমার দাসের খামারে প্রায় ৪৫ কেজি ওজনের দুটি বড় ছাগল। ভরতী রানী দাস এদের দেখাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রশান্ত কুমার দাস বলেন, ‘ফ্রিজিয়ান জাতের সাদা রঙের ষাঁড়টি যখন ছোট ছিল, তখন আমার স্ত্রী ভরতী রানী তাকে “প্রিন্স” নামে ডাকত। অনেক বড় হওয়ায় এখন “সাদা পাহাড়” নামে ডাকে। লম্বায় ৮ ফুট ও প্রায় সাড়ে ৮ ফুট চওড়া সাদা পাহাড়ের ওজন প্রায় ১ হাজার ৪৫০ কেজি বা ৩৮ মণের বেশি (১ কেজি সমান প্রায় ১.০৭ সের; ৪০ সেরে ১ মণ)।’ জেলায় এত বড় গরু নেই বলে দাবি করেন তিনি। ঈদে বিক্রি করবেন বলে দাম হাঁকছেন ১৫-১৬ লাখ টাকা। স্থানীয়ভাবে বিক্রির চেষ্টা করছেন। না হলে ঢাকা বা চট্টগ্রামে নেওয়ার কথা ভাববেন।
প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘খামারে এসে যদি আদর না করি, সাদা পাহাড় গর্জন করতে থাকে। গায়ে হাত দিয়ে আদর করার পর গর্জন থামে। এ ছাড়া খুব শান্ত প্রকৃতির। কখনো কাউকে আঘাত করে না। যে কারণে তার প্রতি অনেক মায়া-মহব্বত তৈরি হয়েছে।’
ভরতী রানী দাস বলেন, ‘আমাদের সবার অনেক আদরের প্রিন্স বা সাদা পাহাড়। প্রতিদিন তাকে কয়েকবার না দেখে থাকতে পারি না। ঈদ সামনে রেখে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সাদা পাহাড় নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তায় আছি। এ ছাড়া লাল বাবু ও ধলা বাবু নামে দুটি বড় ছাগল আছে। একেকটির ওজন প্রায় ৪৫ কেজি। গত রোজার ঈদে ছাগল দুটি সোয়া লাখ টাকার কাছাকাছি দাম হয়েছিল। কিন্তু আমাদের ইচ্ছা ছিল কোরবানির ঈদে বিক্রি করার।’
রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘প্রায় ৩৮ মণ ওজনের এত বড় ষাঁড় রাজবাড়ী জেলায় নেই। খামারিকে ঈদের আগেই স্থানীয়ভাবে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছি। এত বড় পশু রাখা অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। পাংশার একজন উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।’