প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
![]() |
কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় এই বাড়িতে তিন ঘণ্টা ধরে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে কুষ্টিয়া শহরের যে বাসা থেকে আটক করা হয়েছে, সেটি দেড় মাস আগে ভাড়া নেন পেছনের বাড়ির এক দম্পতি। তাঁরা অনলাইনে পোশাক কেনাবেচার কথা বলে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন।
এসব তথ্য জানিয়েছেন ওই বাড়ির মেসে থাকা কয়েকজন ছাত্র। তবে তাঁরা নাম প্রকাশ করতে চাননি।
মেসের বাসিন্দা এক ছাত্র বলেন, মালিকের কাছ থেকে পুরো বাড়িটি তাঁরা ভাড়া নিয়েছেন। একজন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন। দেড় মাস আগে পেছনের বাড়ির বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী মিনারা খাতুন (হীরা) আসেন। তাঁরা নিচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া চান। তাঁরা বলেন, এখানে অনলাইনে পোশাক কেনাবেচার জন্য পোশাক রাখা হবে এবং তাঁদের কিছু লোকজন থাকবেন। মাসিক ছয় হাজার টাকা ভাড়ায় ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন ছাত্ররা। এরপর হেলাল উদ্দিন এই ভবনের সামনে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেন। ক্যামেরার সংযোগ পেছনে তাঁর নিজের বাড়িতে নিয়ে যান।
ওই ছাত্র আরও বলেন, ভাড়া নেওয়ার কয়েক দিন পর এই বাসায় এক ব্যক্তি আসেন। তিনি দেখতে যুবক গোছের। খুব কম সময় বাসা থেকে বের হতেন। তবে তাঁর সঙ্গে কখনো মেসে থাকা ছাত্রদের কথা হতো না। তাঁর নাম–পরিচয় কেউ জানতেন না। ২০ থেকে ২৫ দিন আগে এক নারীকে নিচতলার এই ফ্ল্যাটে দেখতে পান ছাত্ররা। ওই নারী কিছুদিন এখানে অবস্থান করেন বলে ছাত্ররা জানান।
ছাত্ররা জানান, ১০-১২ দিন ধরে এই ভবনের সামনে একটি লাল রঙের প্রাইভেট কার এসে দাঁড়াত। বেশ কিছু লোকের যাতায়াত তাঁরা লক্ষ করতেন। তবে কারও সঙ্গে ছাত্রদের কোনো কথা হতো না। নিচতলার যে ফ্ল্যাট থেকে সুব্রত বাইনকে আটক করা হয়েছে ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে গত দেড় মাসে কোনো রকম খাবার রান্না হয়নি। সব খাবার বাইরে থেকে আনা হতো।
মেসে থাকা আরেক ছাত্র বলেন, তিনি পাঁচ-ছয় দিন আগে আসরের নামাজ পড়তে বের হওয়ার সময় দেখেন নিচতলার ওই ফ্ল্যাটের দরজা খোলা এবং সেখানে দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। ওই ব্যক্তি ছাত্রকে দেখে দ্রুত ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। আজকে যাঁকে আটক করা হয়েছে, তিনি সেদিনের ওই ব্যক্তি বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্ররা।
সুব্রত বাইনকে যে ফ্ল্যাট থেকে আটক করা হয়েছে, ঠিক সেই ভবনের পেছনেই মিনারা খাতুন ও হেলাল উদ্দিনের বাড়ি। মিনারা একটি পোশাকের দোকানের মালিক। তিনি মুঠোফোনে বলেন, তাঁর স্বামীর মাধ্যমে এই ব্যক্তিরা এখানে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। যাঁরা আটক হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন। ভীতসন্ত্রস্ত কণ্ঠে জানান, এই ঘটনায় তাঁরা ফেঁসে গেছেন।
মিনারা খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী হেলাল উদ্দিন ১৭ থেকে ১৮ বছর দুবাই ছিলেন। গত বছরের শেষে বা চলতি বছরের প্রথম দিকে তিনি দেশে ফেরেন। তাঁর স্বামী জমি কেনাবেচা ও ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসা করেন বলে দাবি করেন। দেড় মাস আগে তাঁর স্বামী তাঁকে জানান, কয়েকজন ব্যক্তি এখানে থাকবে, মিনারা যেন সামনের ভবনের নিচতলাটা ভাড়া নেন। এরপর মেসের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন তাঁরা। এরপর ওই ব্যক্তিরা এই নিচতলাতে থাকতে শুরু করেন।
মিনারা খাতুন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, এই ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই, কোনো আত্মীয়তার সম্পর্কও নেই, এমনকি তাঁদের আগে কখনো দেখেননি। স্বামী হেলাল উদ্দিন কোথায় জানতে চাইলে মিনারা খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী গত রাতে বাইরে গেছেন। এখন কোথায় আছেন, জানেন না।
আতঙ্কে মেস ছেড়ে যাচ্ছেন ছাত্ররা
সুব্রত বাইনকে আটকের পর ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকা ছাত্ররা বাড়ি চলে যাচ্ছেন। দুপুরের পর গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। বিকেল চারটার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ১৮ জন ছাত্রের মধ্যে অন্তত ১০ জন ব্যাগ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ছাত্র বলেন, সকালের পর থেকেই তাঁরা আতঙ্কে ছিলেন। এরপর দুপুরে যখন তাঁরা নিশ্চিত হন যে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন তাঁদের এই নিচের ফ্ল্যাটে ছিল, তখনই তাঁরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ জন্য পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তাঁরা বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
এই মেসের তৃতীয় তলায় থাকা দীর্ঘদিনের বাসিন্দা শাহীন আলম বলেন, মেসে থাকা ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাই অনেকেই চলে গেছেন। তবে তিনি এখানে থাকবেন।