প্রতিনিধি রাজশাহী
![]() |
জাহেদুল ইসলাম ও মেয়ে উম্মে তুরাইফা | ছবি: সংগৃহীত |
মেয়েকে মোটরসাইকেলে করে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন মা-বাবা। পথিমধ্যে বাসচাপায় তছনছ করে দিয়েছে তাঁদের জীবন। মারা গেছেন বাবা। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মেয়ে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা। সোমবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে বাঘা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের বাঘা পৌর এলাকার বানিয়াপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বিকেল পাঁচটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাবা জাহেদুল ইসলাম ওরফে শান্ত (২৭)। মেয়ে উম্মে তুরাইফা খাতুন সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালের অর্থোপেডিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। মা জেসমিন আক্তার (২৪) অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত।
নিহত জাহেদুল ইসলাম পেশায় হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী ছিলেন। মেয়ে উম্মে তুরাইফা বাঘা উপজেলা সদরের কিন্ডারগার্টেনে নার্সারির শিক্ষার্থী। স্বামীর সঙ্গে মেয়েকে নিয়ে একই মোটরসাইকেলে আসছিলেন জেসমিন আক্তার। তাঁর ডান হাত ভেঙে গেছে। তিনি সন্তানসম্ভবা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বাবা ও মেয়েকে দুপুরে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল) রেফার করেছিলেন, কিন্তু তাঁদের যাওয়ার শারীরিক সক্ষমতা ছিল না। সার্জিক্যাল আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা মারা যান।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, বেলা ১১টার দিকে আহত অবস্থায় একই পরিবারের তিনজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে বাবা ও মেয়ের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাঁরা বিচ্ছিন্ন পা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। হাসপাতালে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের ঢাকায় যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা ছিল না। এর মধ্যে মেয়ের বাবার অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সার্জিক্যাল আইসিইউ ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মারা যান। মেয়ের অবস্থাও আশঙ্কামুক্ত নয়।
স্থানীয় লোকজনের বরাতে জানা যায়, বাবা-মা-মেয়ে—তিনজন একই মোটরসাইকেলে চেপে কিন্ডারগার্টেনে যাচ্ছিলেন। বাঘা পৌর এলাকার বানিয়াপাড়ায় পৌঁছালে তাঁদের বাঘা থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী সুপার সনি যাত্রীবাহী বাস চাপা দেয়। এতে তাঁরা গুরুতর আহত হন। এ সময় বাবা ও মেয়ের ডান পায়ে হাঁটুর ওপরের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ডান হাতের হাড় ভেঙে আহত হন মা জেসমিন আক্তার। দুমড়েমুচড়ে যায় মোটরসাইকেল। আশপাশের লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ ফ ম আছাদুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে সড়ক পরিবহন আইনে মামলা হবে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একজন মারা গেছেন। হয়তো তাঁরা লাশ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। লাশ এখনো হাসপাতালে আছে।