বিনোদন প্রতিবেদক ঢাকা

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের প্রয়াণদিবসে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ আয়োজন করেছে গীতনাট্য ‘সুরের দয়াল রায়’ | ভৈরবী গীতরঙ্গ দলের সৌজন্যে

‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানের প্রতিটি পঙ্‌ক্তিতে মিশে আছে বাঙালি জাতির আবেগ, পরিচয়। গানটিতে বাঙালির মাটি ও মন, আশা ও অহংকার যেন একাকার হয়ে আছে। এই গানের স্রষ্টা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। বাংলা গানের পঞ্চস্থপতির একজন। তাঁর প্রয়াণদিবসে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ আয়োজন করেছে গীতনাট্য ‘সুরের দয়াল রায়’। পরিবেশনায় ছিল ভৈরবী গীতরঙ্গ দল।

দর্শক আবিষ্কার করেন নতুনভাবে পরিচিত এক দ্বিজেন্দ্রলালকে | ভৈরবী গীতরঙ্গ দলের সৌজন্যে

গত শনিবার ১৭ মে সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় এই প্রযোজনা। প্রযোজনার ভাবনা ও নির্দেশনায় ছিলেন তরুণ নির্দেশক ইলিয়াস নবী ফয়সাল। ভৈরবী রাগ ও ত্রিতাল তালে ‘আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে/ প্রকৃতি সতীরে সাজিয়ে দাও’ গান দিয়ে শুরু হয় পরিবেশনা। একে একে পরিবেশন করা হয় ‘ঘন-তমসাবৃত অম্বর-ধরণী’, ‘আজি এসেছি বঁধু হে’, ‘বেলা বয়ে যায়’, ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কী সংগীত ভেসে আসে’, ‘বঙ্গ আমার! জননী আমার! ধাত্রী আমার! আমার দেশ’, ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’সহ বিভিন্ন সংগীতের ছায়ায় নৃত্য ও আবৃত্তির মেলবন্ধন।

শেষে মঞ্চ আলোকিত করে পরিবেশিত হয় রোমান্টিক ও স্বপ্নিল গীতিকবিতা ‘আমরা মলয় বাতাসে ভেসে যাব শুধু/ কুসুমের মধু করিব পান, / ঘুমাব কেতকী সুবাস শয়নে/ চাঁদের কিরণে করিব স্নান।’ তখন মিলনায়তনজুড়ে নেমে আসে এক অদ্ভুত নীরবতা, শ্রোতা-দর্শক যেন হারিয়ে যান সেই সুরের নদীতে। দর্শক মুগ্ধ হয়ে শোনেন প্রতিটি গান। গান, কবিতা, নৃত্য ও আলোকমালার ছায়ায় মঞ্চ জেগে ওঠে এক কালজয়ী সংগীত ব্যক্তিত্বের সুরে। প্রায় অর্ধশত শিল্পী একসঙ্গে মঞ্চে তুলে ধরেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জীবন, দর্শন, দেশপ্রেম ও তাঁর গানের মহিমা। নাট্য, সংগীত ও নৃত্যের ছন্দে তৈরি হয় এক সাংস্কৃতিক কাব্যগ্রন্থ। যেখানে দর্শক আবিষ্কার করেন নতুনভাবে পরিচিত এক দ্বিজেন্দ্রলালকে।

শনিবার ১৭ মে সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় এই প্রযোজনা | ভৈরবী গীতরঙ্গ দলের সৌজন্যে

এর আগে পরিবেশনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন সুরের এক রূপকার। তাঁর গান আজও আমাদের আত্মাকে ছুঁয়ে যায়। সেই সব গান ও সুর মঞ্চে নিয়ে আসতে পেরে আমরা বেশ আনন্দিত।’

প্রযোজনাটির নির্দেশক ইলিয়াস নবী ফয়সাল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সংগীতের ভেতর দিয়ে ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখা যায়। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় শুধু গানের মানুষ নন, তিনি ছিলেন এক মুক্তচিন্তার বাহক। তাঁর গান ছিল প্রতিবাদ, প্রেম, দেশপ্রেম আর সাহসের প্রতীক। এই গীতিনাট্যে আমরা চেয়েছি তাঁর সুরের দ্যুতির ভেতর দিয়ে দর্শক যেন ফিরে যেতে পারেন সময়ের আরেক গহ্বরে, যেখানে গান আর দেশ একাকার হয়ে আছে।’