প্রতিনিধি সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। শনিবার বেলা ১১টার দিকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের মারধর ও ভাঙচুর করার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে।  শনিবার রাতে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ জ্যেষ্ঠ নার্স মর্জিনা খাতুন সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। এর আগে গতকাল বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় দুজন চিকিৎসক, দুজন নার্সসহ সাতজন আহত হন।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমেদ ওরফে মানিক হামলায় নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনার পর বেলা তিনটার দিকে সোহেল আহমেদকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমতুল্লাহ ও সদস্যসচিব আবু জাহিদ।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শেখ ফায়সাল আহমেদ বলেন, শাহিন হোসেন (২৫) নামের একজন গুরুতর জখম রোগী নিয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কয়েকজন জরুরি বিভাগে আসেন। ওই ব্যক্তিকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আক্তার মারুফ চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। কিন্তু হাসপাতালে অন্তবিভাগে চিকিৎসককে না পেয়ে রোগীর স্বজনেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে তাঁরা আবার জরুরি বিভাগে ফিরে এসে চিকিৎসক আক্তার মারুফের সঙ্গে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ওই রোগীর স্বজনেরা জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আক্তার মারুফ, তানভির রহমান, নার্স সাহানা পারভিন, মর্জিনা খাতুন, জরুরি বিভাগে কর্মরত ফরিদ আহমেদ, মাসুম হোসেন ও সমীরণকে মারধর করেন। ভাঙচুর করেন জরুরি বিভাগের চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র।

এজাহারে একই তথ্য উল্লেখ করেছেন মামলার বাদীও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জরুরি বিভাগের দুজন বলেন, সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমেদের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত চিকিৎসক তানভির রহমান একটি গবেষণার জরিপের কাজে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অবস্থান করছিলেন। তিনি সোহেল আহমেদের ছবি দেখিয়ে বলেন তাঁর নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমেদ। তিনি বলেন, চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর স্বজনেরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। কয়েকজন মিলে চিকিৎসক তানভির রহমানকে মারধর করছিলেন। এ সময় ঠেকাতে গিয়ে নিজেও মারধরের স্বীকার হন। অন্য কোনো বিষয় নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাঁর নাম জড়িয়ে অপপ্রচার চালানোয় বিএনপি থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সাতক্ষীরা জেলার একজন দায়িত্বশীল নেতা হয়েও আপনি (সোহেল আহমেদ) দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টিসহ নানা সংঘাতমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে বহিষ্কার করা হলো।’

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামিনুল হক জানান, সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ জ্যেষ্ঠ নার্স মর্জিনা খাতুন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গতকাল রাতে মামলা করেছেন। পুলিশ ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করেছে। আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।