প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর
![]() |
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের নয়তলা ভবনের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। তবে ঠিকাদার বাকি কাজ শেষ না করায় ভবনটিতে এখনো হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে বাঁ পাশেই চোখে পড়ে একটি বহুতল ভবন। ৯ তলা এ ভবনের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে দেড় বছর আগে। নির্মাণাধীন ভবনটির কাজ ২০২০ সালে শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার বারবার কাজের মেয়াদ ও নির্মাণ খরচ বাড়িয়েছে। ভবনটির কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় দূর হচ্ছে না সদর হাসপাতালের শয্যাসংকট। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার স্বাস্থ্যসেবাপ্রত্যাশী মানুষজন।
গণপূর্ত বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের জুন মাসে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালকে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য ৯ তলা ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৬৪ টাকা, কাজের মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। সে হিসাবে কাজটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে বারবার কাজের মেয়াদ ও খরচ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ ৪৮ হাজার ৪৭৭ টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রুপালি জি এম সন্স কনসোর্টিয়াম ৯ তলা ভবনের নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় বলে গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার ইস্কান্দার মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। এর ফলে ভবনের শেষ সময়ের কাজ ঝুলে গেছে।
ভবনের রং, সিঁড়ির রেলিং, দরজার পাল্লা, পানির লাইনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় সময়মতো বুঝে নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর গণপূর্তের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন। তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য ইস্কান্দার মির্জার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন, এই তথ্যও দিতে পারেননি কেউ।
গত বুধবার ভবনটির অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গণপূর্ত বিভাগের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নাছিম আহমেদ। জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন বলেন, ‘অল্প কিছু কাজ শেষ না করায় ভবনটি রোগীদের কোনো উপকারে আসছে না। গণপূর্ত বিভাগকে আমরা বারবার তাগাদা দিচ্ছি। তারা জানিয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করে হস্তান্তর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করলেই আমরা কার্যক্রম শুরু করে দেব।’
শয্যাসংকট, মেঝেতে রেখে চিকিৎসা
গত শনিবার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় বারান্দার মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। পঞ্চাশোর্ধ্ব আমেনা বেগম এক সপ্তাহ ধরে বুকের ব্যথায় ভুগছেন। তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন ছেলে মামুনুর রশিদ। কিন্তু শয্যা না থাকায় মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মামুনুর রশিদ বলেন, শয্যাসংকটে রোগীরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে হাসপাতালের নতুন ভবনের কাজ শেষ করে শয্যাসংকট দূর করার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। গত ২০ মার্চ সদর হাসপাতালের সামনে নতুন এ ভবনের কার্যক্রম চালুর দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশ গ্রহণ করেন।
মূলত অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে চিকিৎসা–সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরূপ পাল। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ছয় শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। নতুন একটি ভবন হয়েছে। ভবনটি বুঝে পেলে কার্যক্রম চালু হবে। তখন রোগীদের ভোগান্তি অনেকটা কমবে বলে আশাবাদী তিনি।