প্রতিনিধি লোহাগাড়া

দুই যমজ ভাই আদিল হোসেন ও আবীর হোসেন। সব সময় একসঙ্গে থাকত তারা। আম কুড়াতে গিয়ে একসঙ্গেই পুকুরে ডুবে মৃত্যু হয় তাদের | ছবি: পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া

আম কুড়াতে গিয়ে ছিল যমজ দুই ভাই আদিল ও আবীর। মা ঘরের বিছানায় শয্যাশায়ী। কখন আম কুড়াতে কুড়াতে দুই ভাই গিয়ে পড়েছে পুকুরে, কেউ জানে না। যখন জানতে পারল, তখন একজনের লাশ ভেসে উঠেছে পুকুরের পানিতে। স্বজনেরা পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে খুঁজে পেল অন্যজনের মরদেহ।

আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড় হাতিয়া ইউনিয়নের হরিদার ঘোণা পল্লানের পাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সাড়ে তিন বছর বয়সী দুই যমজ ভাই আদিল হোসেন ও আবীর হোসেনের মৃত্যু হয় বাড়িরে পাশের পুকুরে ডুবে। তারা ওই এলাকার আজিজুল হকের ছেলে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মারা যাওয়া দুই ভাইয়ের মা পারভীন আক্তার অসুস্থতার কারণে বাড়িতে শয্যাশায়ী ছিলেন। দুপুরে মায়ের অজান্তেই দুই ভাই আম কুড়াতে যায়। বেলা দুইটার দিকে বাড়ি থেকে ১০০ ফুট দূরে একটি পুকুরে তাদের এক চাচাতো বোন অজু করতে গেলে একজনকে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান। পরে স্থানীয় লোকজন খোঁজাখুঁজি করে অন্যজনকেও পুকুর থেকে উদ্ধার করে উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

ঘরের মেঝেতে বসে বুক চাপড়ে বিলাপ করছিলেন দুই শিশুর বাবা আজিজুল হক। আজ দুপুরে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড় হাতিয়া ইউনিয়নের হরিদার ঘোণা পল্লানের পাড়া গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

দুই সন্তানের এমন মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না তাদের মা পারভীন আক্তার ও বাবা আজিজুল হক। দুজনই সারাক্ষণ একসঙ্গে থাকত। মৃত্যুও হলো একই সঙ্গে। পল্লানের পাড়া এলাকায় দুই শিশুর বাড়িতে এখন শুধুই কান্না আর আহাজারি। স্বজন-প্রতিবেশীরা কেউ শিশুদের মা–বাবাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।

আজ বিকেলের দিকে বাড়িটিতে গিয়ে দেখা গেল প্রতিবেশী-স্বজনদের ভিড়। উপস্থিত লোকজন জানালেন, যমজ দুই শিশুর বাবা পেশায় নির্মাণশ্রমিক। তিনি বেশির ভাগ সময়ই বাড়ির বাইরে থাকতেন। শিশুদের দেখাশোনা করত তাদের দাদা। গত এক সপ্তাহ আগে তিনি মারা যান। বাবা হারানোর শোকের মাঝেই আজিজুল দুই সন্তান হারালেন।

ঘরের মেঝের এক জায়গায় পড়ে বিলাপ করছিলেন আজিজুল। দুজন এসে ধরলেও ওঠাতে পারেননি তাঁকে। সন্তানের শোকে বুক চাপড়ে কান্না করছিলেন তিনি।

শিশুদের মামা মো. ফারুক বলেন, ‘আমার বোনের এই দুই ছেলেই ছিল। আর কোনো সন্তান নেই তাঁদের। ছয় মাস ধরে বোন অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। এ ঘটনায় তিনি বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।’