নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ১৫ আগস্ট রাতে জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয় | ফাইল ছবি

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের (বরখাস্ত) একটি বাগানবাড়িসহ চারটি বাড়ি এবং তিনটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া জিয়াউলের নামে থাকা আরও নয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসেবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর বাইরে তাঁর নামে থাকা বিভিন্ন কৃষিজমিও জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জিয়াউল আহসানের আটতলা একটি বাড়ি, বরিশালে একটি বাগানবাড়ি, একটি একতলা বাড়ি ও নির্মাণাধীন আটতলা একটি বাড়ি রয়েছে; আর ফ্ল্যাট তিনটি ঢাকার মিরপুর, উত্তরা ও মিরপুর ডিওএইচএসে।

গত ১৬ আগস্ট সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে গভীর রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এখন তিনি কারাগারে আছেন।

জিয়াউল আহসান সর্বশেষ টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। গত ১৫ বছর আলোচিত ও প্রভাবশালী এই কর্মকর্তাকে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম–দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে প্রায় ৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২৩ জানুয়ারি জিয়াউল আহসান ও তাঁর স্ত্রী নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

পরের দিন দুদক জানায়, তারা অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে, জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার নাগরিকত্ব নিয়ে বিপুল অর্থ অবৈধভাবে সেখানে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি দুবাই, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে বড় অঙ্কের টাকা পাচার করেছেন। এ ছাড়া তাঁর দেশে–বিদেশে বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১৭ সালে জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছে দুদক। ওই নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় জিয়াউল আহসান ও তাঁর পরিবার দুই লাখ মার্কিন ডলার মালয়েশিয়ার দুটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিশোধ করেন। এ ছাড়া জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ডে প্রায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার অবৈধভাবে বিনিয়োগ করেছেন।

দুদক অনুসন্ধানকালে আরও জানতে পারে, জিয়াউল আহসান দুবাইয়ের ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংক নামের একটি ব্যাংকের হিসাবে ২০ কোটি টাকা ও আরেকটি ব্যাংক হিসাবে ৭৫ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক হিসাবে ৭৫ কোটি টাকা ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংক হিসাবে বড় অঙ্কের টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়া জিয়াউল আহসান ২০০৯ সালে মেজর থাকাকালে র‍্যাব-২–এর উপ-অধিনায়ক হন। ওই বছরই তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন এবং র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার পরিচালকের দায়িত্ব পান। পরে কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হন। ২০১৬ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর কিছুদিন তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৭ সালে তাঁকে এনটিএমসির পরিচালক করা হয়। ২০২২ সালে সংস্থাটিতে মহাপরিচালক পদ সৃষ্টি করে তাঁকে এনটিএমসির নেতৃত্বে রাখা হয়।