[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

কোরবানির পশুর চামড়ার ভালো দাম পেতে কী করবেন, কী করবেন না

প্রকাশঃ
অ+ অ-

কোরবানির পশুর চামড়া | ফাইল ছবি

শফিকুল ইসলাম: কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করা নিয়ে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েন। প্রায়ই অভিযোগ আসে, চামড়ার ভালো দাম পাওয়া যায় না; পানির দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে। অবশ্য চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে চামড়ার সম্ভাব্য ক্ষতি এড়িয়ে তুলনামূলক ভালো দামে তা বিক্রি করা যায়।

চামড়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ ও রপ্তানি পণ্য। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে বেচাকেনার মধ্যেই এটির কার্যকারিতা শেষ হয় না; বরং চামড়া প্রক্রিয়াজাতের পরেই তা মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়। তাই ভালোভাবে চামড়া সংরক্ষণের ওপরে সব সময়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ। গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ পশু।

বেড়েছে চামড়ার দাম
চলতি বছর কোরবানির মৌসুমে গরুর চামড়ার দাম আগের বছরের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। এ বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।

অর্থাৎ এ বছর ঢাকায় গরুর লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গত বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা, আর ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ সাত টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।  

শুরু থেকেই সতর্ক থাকা
ভালোভাবে চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রাথমিক পর্যায় অর্থাৎ, পশুর চামড়া ছাড়ানোর সময় থেকেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যত্ন সহকারে চামড়া থেকে মাংস ছাড়াতে হবে। অসতর্কভাবে চামড়া কেটে গেলে কিংবা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওই চামড়ার মূল্যমান কমে যায়। চামড়া ছাড়ানোর পরে সর্বোচ্চ ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যে তাতে লবণ দিতে হবে। তা না হলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।

সরকার চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করেছে, তা লবণযুক্ত চামড়ার হিসাবেই করা হয়েছে। সাধারণত, কোরবানির পরে বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকেরা বা মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন। এরপর তা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী বেচাকেনার হাটে নিয়ে যান তাঁরা। সেখান থেকে বিভিন্ন ট্যানারি প্রতিষ্ঠান, আড়তদার ও ব্যাপারীরা একপ্রকার অনুমাননির্ভর দামে কাঁচা চামড়া কিনে তা লবণজাত করেন। পরবর্তী সময়ে এই লবণজাত চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে ট্যানারিতে বিক্রি করা হয়।

লবণ দেওয়ার প্রক্রিয়া
কোরবানিদাতা বা প্রাথমিকভাবে চামড়া সংগ্রহকারীরাও চামড়াতে লবণ যুক্ত করতে পারেন। চামড়ায় লবণ যুক্ত করা কঠিন কাজ না। তবে সে ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথম কথা হচ্ছে, কোরবানির পরে যত দ্রুত সম্ভব চামড়ায় লবণ দেওয়া ভালো।

পশুর গা থেকে চামড়া ছাড়ানোর সময় মাঝেমধ্যে কিছু মাংস চামড়ার গায়ে আটকে থাকে। লবণ দেওয়ার আগে অবশ্যই চামড়ায় আটকে থাকা এই বাড়তি মাংস ছাড়িয়ে নিতে হবে। তাতে চামড়া কোনোভাবেই নষ্ট হবে না। ছায়াযুক্ত কোনো স্থানে যেমন গাছতলা, গ্যারেজ বা প্যান্ডেল টানিয়ে লবণযুক্ত করতে হবে। চামড়ার জন্য বৃষ্টি বা অতিরিক্ত গরম—কোনোটাই ভালো না।

কতটা লবণ লাগবে
পোস্তার ব্যবসায়ী মো. টিপু সুলতান জানান, চামড়ার হিসাব বর্গফুটে করা হয়। ৩৫ থেকে ৫০ বর্গফুটের চামড়াকে বড় আকারের ধরা হয়। এই আকারের একটি চামড়া সংরক্ষণের জন্য ৮ থেকে ৯ কেজি লবণের প্রয়োজন হয়। আর চামড়ার আকার ৫৫ থেকে ৬০ বর্গফুট হলে লবণ লাগে ১০ কেজির মতো।

অন্যদিকে মাঝারি (২০-২৫ বর্গফুট) আকারের একটি চামড়ার জন্য ৫ থেকে ৬ কেজি লবণ প্রয়োজন হয়। আর ছোট (১৫-১৬ বর্গফুট) আকারের চামড়ার জন্য লবণ লাগে ৩ থেকে ৪ কেজি। এ ছাড়া এক কেজি লবণ দিয়ে দুটির বেশি ভেড়া, ছাগল বা খাসির চামড়া সংরক্ষণ করা যায়। যত নিখুঁতভাবে লবণ লাগানো যাবে, তত ভালো দাম পাওয়া যাবে। 

চামড়ায় সাধারণত মোটা দানার লবণ যুক্ত করা হয়। চলতি বছর মোটা দানার লবণের দাম আগের বছরের তুলনায় কম। গত বছর ৭৪ কেজির বড় দানার লবণের প্রতি বস্তার দাম ছিল ১ হাজার ৩৫০ টাকা। এ বছর তা কমে ১ হাজার ৫০ টাকা হয়েছে। তাতে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৮ টাকার আশপাশে।

এই হিসেবে বড় আকারের তথা ৩৫ থেকে ৫০ বর্গফুটের চামড়ার জন্য ৮ থেকে ৯ কেজি বা ১৪৫-১৬২ টাকার লবণ প্রয়োজন হবে। লবণ যুক্ত করা হলে অনায়াসে সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া বিক্রি করতে করা যাবে। একটা উদাহরণ দিই—মাঝারি আকারের গরুর চামড়ার আকার অন্তত ২০ বর্গফুট হয়। ঢাকায় এক লাখ টাকা দামের একটি গরুর চামড়া যদি ২০ বর্গফুট হয়, তখন ওই গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম হবে ১ হাজার ২০০ টাকা। ঢাকার বাইরে হবে এক হাজার টাকা। তবে কাঁচা চামড়া বিক্রি করা হলে আরও কয়েক শ টাকা কম পাওয়া যাবে।

পোস্তার আড়তদারেরা জানান, পরিবহন খরচ ও কারিগরের মজুরিসহ প্রতিটি চামড়ায় লবণ যুক্ত করতে তাদের ২৯০-৩২০ টাকা লাগে। এই দর হিসাব করে তাঁরা অনুমানের ভিত্তিতে ঈদের সময় কাঁচা চামড়া কিনে থাকেন।

লবণ দিতে না পারলে
সবার পক্ষে চামড়ায় লবণ দেওয়া সম্ভব হয় না। তাদের উচিত হবে দ্রুততম সময়ে কাঁচা চামড়া বিক্রি করে দেওয়া। রাজধানীতে পোস্তা ছাড়াও সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, মিরপুর, গুলশান, বনানী, সাভার, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার, জিঞ্জিরা, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গীসহ বিভিন্ন স্থানে কাঁচা চামড়া কেনার জন্য আড়তদারেরা অপেক্ষা করেন। ফলে কাছের কোনো জায়গায় দরাদরি করে কাঁচা চামড়া বিক্রি করে দেওয়া ভালো। এ ক্ষেত্রেও ভালো দাম পেতে সঠিকভাবে চামড়া ছাড়াতে হবে।

পরিবহনের দীর্ঘসূত্রতার কারণে কাঁচা চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য কিছু সরকারি বিধিনিষেধও রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ঈদের ১০ দিন পর থেকে ঢাকার বাইরে থেকে চামড়া রাজধানী শহরে প্রবেশ করতে পারবে। এর আগে অন্য জেলার পশুর চামড়া নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করা যাবে না।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন