[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

শোক ও ভালোবাসায় বৈমানিক আসিম জাওয়াদকে বিদায়

প্রকাশঃ
অ+ অ-

 ঢাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের প্যারেড গ্রাউন্ডে গার্ড অব অনার দেওয়া হয় প্রয়াত স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ: চট্টগ্রামে বিমানবাহিনীর বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের নিহত বৈমানিক আসিম জাওয়াদের (৩২) মা নিলুফা আক্তার খানমের আহাজারি এখনো থামেনি। আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে জেলা শহরের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষও মর্মাহত। আজ শুক্রবার তাঁরা শোক ও ভালোবাসায় শেষবিদায় জানিয়েছেন কৃতী বৈমানিক আসিম জাওয়াদকে।

আজ সকালে জেলা শহরের পশ্চিম দাশড়া এলাকার বৈমানিক আসিমদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে মা নিলুফা আক্তার খানম আহাজারি করছিলেন। সন্তানের মুখখানি দেখতে দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি। শোকাহত স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদের মরদেহ নিয়ে মানিকগঞ্জ শহরে শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। এ সময় মরদেহের সঙ্গে নিহতের বাবা আমান উল্লাহ, স্ত্রী অন্তরা খানম এবং দুই শিশুসন্তানও ছিল। এর আগে থেকে সেখানে পরিবারের অন্যান্য সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও নানা শ্রেণি-পেশার শত শত মানুষ ভিড় করেন। এর কিছুক্ষণ আগে বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার আননুরের নেতৃত্বে ৫০ জন সদস্য সড়কপথ হয়ে স্টেডিয়ামে আসেন।

মানিকগঞ্জ স্টেডিয়ামে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের জানাজা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

বৈমানিক আসিম জাওয়াদের মরদেহ আনার পর স্টেডিয়াজুড়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। একমাত্র সন্তানের মরদেহ আনার পর মা নিলুফা আক্তার মাঠেই আহাজারি করতে থাকেন। ‘আমার বাবা (সন্তান) আমাকে কেন রেখে চলে গেল। আমার কী দোষ ছিল! কেন আমার বুক খালি হলো।’ বলছিলেন আর আহাজারি করছিলেন নিলুফা আক্তার।

হেলিকপ্টার থেকে আসিম জাওয়াদের মরদেহ নামিয়ে ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে রাখা হয়। পরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মিলনায়তনে মরদেহ নেওয়া হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনেরা আসিম জাওয়াদকে শেষবারের মতো দেখে নেন।

২০১৬ সালে স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ অন্তরা খানমকে বিয়ে করেন। তাঁদের আয়েজা খানম নামের ছয় বছরের এক মেয়ে এবং এক বছরের এক ছেলে রয়েছে। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে থাকতেন।

আসিম জাওয়াদের খালাতো ভাই মশিউর রহমান বলেন, আসিম জাওয়াদ ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল বৈমানিক হবেন। এমবিবিএস ও প্রকৌশলী পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণও হয়েছিলেন। তবে তাঁর স্বপ্নপূরণে তিনি বিমানবাহিনীতে যোগ দেন।

আজ জুমার নামাজের পর শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে আসিম জাওয়াদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন পেশার শত শত মানুষ অংশ নেন। জানাজার আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীন বলেন, নিহত বৈমানিক আসিম জাওয়াদ পরিবারের শুধু সন্তান ছিলেন না; তিনি দেশের সম্পদ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে এ জেলা একজন কৃতী সন্তানকে হারাল।

জানাজার আগে আসিম জাওয়াদের বাবা আমান উল্লাহ বলেন, ‘আসিম জাওয়াদের দুটি শিশুসন্তান রয়েছে। আমরা যেন ওদের মানুষের মতো মানুষ করতে পারি। ওরা যেন বাবার অভাব বুঝতে না পারে। আসিম যেন বেহেশতবাসী হয়, সবাই দোয়া করবেন।’

জানাজা নামাজের পর বেলা আড়াইটার দিকে ফ্রিজিং গাড়িতে করে বৈমানিক আসিম জাওয়াদের মরদেহ জেলা শহরের উত্তর সেওতা কবরস্থানে নেওয়া হয়। সেখানে বিমানবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকতা শেষে কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের ২০ মার্চ আসিম জাওয়াদ জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে তিনি ঢাকার সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০০৯ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে বিএসসি (অ্যারো) পাস করেন। ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিসহ জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। চাকরিকালীন তিনি দেশ-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সফলতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করেন।  

গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্ত বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানে আগুন লাগার পরে আসিম জাওয়াদ ও অপর একজন বৈমানিক প্যারাস্যুট দিয়ে নেমে আসেন। এ সময় কর্ণফুলী নদী থেকে তাঁদের উদ্ধার করে বিএনএস পতেঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদের মৃত্যু হয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণ বিমানটিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে দুই বৈমানিক অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে বিমানটিকে বিমানবন্দরের কাছে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন