[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

রাইসির মৃত্যু: যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টার কতটা নিরাপদ ছিল

প্রকাশঃ
অ+ অ-

বেল ২১২ হেলিকপ্টার | ছবি: রয়টার্স

পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: ইরানের উত্তর পশ্চিমের তাবরিজ এলাকায় গত রোববার হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান এবং আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ প্রাদেশিক কর্মকর্তা। প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ছিল বেল-২১২ মডেলের। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই হেলিকপ্টার ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের আগে কিনেছিল তেহরান। সে হিসাবে এটি বেশ পুরোনো। এর আগেও একবার ইরানে এই মডেলের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। রোববারের ওই ঘটনায় হেলিকপ্টারে থাকা কেউই বেঁচে নেই। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে ইরান। কিন্তু তার আগেই হেলিকপ্টারটির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

১৯৬৮ সালে সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য বেল ২১২ মডেলের হেলিকপ্টার প্রথম আকাশে ওড়ে। এটি তৈরি শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফোর্ট ওর্থে। এরপর ১৯৮৮ সালে এর কারখানা সরিয়ে নেওয়া হয় কানাডার মিরাবেল শহরে। পরে ১৯৮৮ সালে এর উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এর নিরাপত্তা নিয়ে আগে থেকেই উদ্বেগ ছিল। ২০২১ সালে কানাডা জানায়, তারা আর বেল ২১২ মডেলের হেলিকপ্টার ব্যবহার করবে না। বেল ২১২ নিয়ে করা এক তদন্তে এই হেলিকপ্টার উড্ডয়নের সময়ে নানা যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি উঠে আসার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয় কানাডা।

বেল ২১২ হেলিকপ্টারটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি টেকসই ও চালানো সহজ। তাই বেসামরিক যোগাযোগেও এর ব্যবহার শুরু হয়। বেল ২১২ মডেলের হেলিকপ্টারের ক্রুসহ ১৫ যাত্রী বহনের সক্ষমতা রয়েছে। এটি সামরিক কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণের কাজেও ব্যবহার করা যায়। রাইসির হেলিকপ্টারটিকেও ১৫ যাত্রী বহনের উপযোগী করে রূপান্তর করা হয়।

কারিগরি দিক
বেল ২১২ হেলিকপ্টারটি একজন বা দুজন পাইলট ওড়াতে পারেন। এটি ১৭ দশমিক ৪১ মিটার দীর্ঘ ও উচ্চতায় ৩ দশমিক ৮৩ মিটার। খালি অবস্থায় এর ওজন ২ হাজার ৯৬২ কেজি। এটি সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৮০ কেজি নিয়ে উড়তে পারে। এতে ২টি পাখা ও ১ হাজার ৩০০ কিলোওয়াটের ইঞ্জিন থাকে। এর প্রতিটি পাখা ১৪ দশমিক ৬৩ মিটার লম্বা। হেলিকপ্টারটি সাধারণত ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এর গতি ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এটি একনাগাড়ে ৪৩৯ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। এ ছাড়া এটি ১৭ হাজার ৩৮৮ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম। 

রক্ষণাবেক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশের ঘাটতি
ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। এতে তাদের মার্কিন যন্ত্রাংশ পেতে ও তা রক্ষণাবেক্ষণে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এতে দেশটিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ঘাটতিও সৃষ্টি করেছে।

১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শাহের পতন ঘটার পরও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে ইরান। অনেকগুলো এখনো ইরানের বহরে আছে। তবে বিপ্লবের পর তেহরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব মেরামতে যন্ত্রাংশ কেনাটা ইরানের জন্য কঠিন হয়ে ওঠে। ধারণা করা হয়, ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি ৪৫ বছরের পুরোনো। ইরানের সামরিক বাহিনীতে এ ধরনের ১০টি হেলিকপ্টার রয়েছে।

ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ ইরানের প্রেসিডেন্ট ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের মৃত্যুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে ইরানের জনগণ আকাশপথের সুবিধা উপভোগ করতে পারছেন না। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, ইরানের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার সঙ্গে ওয়াশিংটনের কোনো ভূমিকা নেই। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইরান সরকারই এর জন্য দায়ী। তারা এ ধরনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ৪৫ বছরের পুরোনো হেলিকপ্টার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

তবে ইরানের পক্ষ থেকে এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিকল্প ছিল রাশিয়ার হেলিকপ্টার
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুরোনো মার্কিন হেলিকপ্টার বাদ দিয়ে রাশিয়ার হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারত ইরান। এভিয়েশন শিল্পের পরামর্শদাতা রিচার্ড আবুলাফিয়া বলেন, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা কালোবাজার বা চোরাই বাজার থেকে যন্ত্রাংশ কিনছে। কিন্তু তাদের কাছে বিকল্প হিসেবে রাশিয়ার হেলিকপ্টার ব্যবহারের সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা সে পথে হাঁটেনি।

আবুলাফিয়া বলেন, ইরান নিষেধাজ্ঞার দোহাই দিচ্ছেন, সেটি ঠিক আছে। কিন্তু রুশ হেলিকপ্টারের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। রাশিয়ার হেলিকপ্টার মানের দিক থেকে অনেক ভালো। বেল ২১২–এর মতো পুরোনো হেলিকপ্টারে করে প্রেসিডেন্টকে সফর করতে দেওয়া তাদের ঠিক হয়নি।

আবুলাফিয়া বলেন, নিজেদের অদক্ষতা ঢাকতে ইরানি কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞার দোহাই দিচ্ছে। তারা রাশিয়ার এমআই-১৭ যেকোনো সময় কিনতে পারত। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করে থাকেন।

পুরোনো হেলিকপ্টার ওড়ানোর জন্য যে রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন, তা ঠিকমতো করা হয় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি আবুলাফিয়া। তিনি বলেন, বেল ২১২ অনেক পুরোনো মডেল। এর অনেক প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ কালোবাজারে পাওয়া যায়। অর্ধশতাব্দী পুরোনো হেলিকপ্টার, যদি নিখুঁতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তাহলে তা ঠিক আছে। কিন্তু কালোবাজারের যন্ত্রাংশ এবং স্থানীয় রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি নিশ্চয়ই কোনো ভালো সমন্বয় নয়।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন