জয়পুরহাটে ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে কলেজশিক্ষককে মারধর
![]() |
| জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল সরকারি সাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজের আহত শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস সহকর্মীদের নিয়ে থানায় আসেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি জয়পুরহাট: ভোটারদের ভোটকেন্দ্র আসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ছাত্রলীগের নেতারা এক কলেজশিক্ষককে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার কলেজ সড়কের মৎস্য খামারের সামনে তাঁকে মারধর করা হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষকের নাম জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে রনি (৩২)। তিনি ক্ষেতলাল সরকারি সাঈদ আলতাফুনেচ্ছা কলেজের প্রভাষক। ক্ষেতলাল উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মেহেদী আশিক রাজু ও যুগ্ম আহ্বায়ক জুল আরশ শুভ দলবল নিয়ে তাঁকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনার প্রতিবাদে বেলা সাড়ে তিনটায় ওই কলেজের শিক্ষকেরা ক্ষেতলাল থানার সামনে মানববন্ধন করেছেন। এরপর অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মারধরের শিকার ওই শিক্ষক। এ সময় কলেজের অন্য শিক্ষকেরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদৌস ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের নশিরপুর গ্রামের আবদুর রশিদ মণ্ডলের ছেলে। তিনি ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আঞ্জুমান খালেদের ভাগনে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, থানা-পুলিশ, কলেজ ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদৌস আজ সকালে কলেজে আসেন। উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মেহেদী আশিক ও যুগ্ম আহ্বায়ক জুল আরশ দুপুর কলেজে এসে প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদৌসকে খোঁজাখুঁজি করেন। জান্নাতুল তখন দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বাজারে যাচ্ছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে কলেজ সড়কের মৎস্য খামারের সামনে তাঁকে পেয়ে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী ও জুল আরশ দলবল নিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। ঘটনা শোনার পর কলেজের অন্য শিক্ষকেরা এগিয়ে এসে ওই প্রভাষককে ছাত্রলীগ নেতাদের হাত থেকে উদ্ধার করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বেলা সাড়ে তিনটায় কলেজের শিক্ষকেরা থানার সামনে মানববন্ধন করেন। ওই মানববন্ধন থেকে শিক্ষকেরা অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। অন্যথায় আগামী রোববার থেকে কলেজে ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। খবর পেয়ে জয়পুরহাট সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইশতিয়াক আলম বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি মারধরের শিকার শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বিকেল সাড়ে চারটায় ক্ষেতলাল থানায় গিয়ে প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদৌসকে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘ক্ষেতলাল উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মেহেদী আশিক রাজু ও যুগ্ম আহ্বায়ক জুল আরশ শুভ আমার পথরোধ করে আমাকে বলে, “তুই লোকজনদের ভোট দিতে বাধা দিয়েছিস। তোর খবর আছে।” এ কথা বলেই তারা দুজন আমাকে বেধড়ক কিলঘুষি মারতে শুরু করে। এরপর আরও ১৫-২০ জন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা আমাকে লাঠিপেটা করে। এ সময় আমার চিৎকারের সহকর্মীরা এগিয়ে এসে আমাকে ছাত্রলীগের কবল থেকে উদ্ধার করে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। চিকিৎসা শেষে বিকেলে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’
প্রভাষক জান্নাতুল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কাউকে ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেননি বলে দাবি করেন।
ক্ষেতলাল সরকারি সাঈদ আলতাফুন্নেছা কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান কে এম ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘এটা ধৃষ্টতা। আমরা মানববন্ধন করেছি। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি। আগামী রোববারের আগে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা ওই দিন থেকে লাগাতার ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করব।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ক্ষেতলাল উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মেহেদী সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন। কলেজশিক্ষককে মারধরের বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক জুল আরশ শুভ কথা বলবেন বলে তাঁকে ফোন ধরিয়ে দেন। জুল আরশ ফোনে কথা বলবেন না জানিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেন।
ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, সহকর্মীকে মারধরের ঘটনায় শিক্ষকেরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Comments
Comments