উসকানিমূলক আধেয় দমনে মেটাকে চিঠি দিল অন্তর্বর্তী সরকার
![]() |
| গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকার ও মেটা |
অন্তর্বর্তী সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে সহিংসতা উসকে দেওয়া ও নির্বাচন বানচালের চেষ্টা এবং সংবাদমাধ্যমে হামলার আহ্বান জানানো কনটেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মেটাকে চিঠি দিয়েছে।
জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি গতকাল শুক্রবার মেটাকে চিঠি দেয়। এতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট পর্যন্ত বাংলাদেশ–সংক্রান্ত কনটেন্টের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে থাকা বাংলাদেশে মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোকে সহিংসতা ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে বাস্তব জীবনে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জনমনে উত্তেজনা ভয়াবহভাবে বাড়ছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরপরই ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে দুর্বৃত্তরা ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে আহত করে। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থা খারাপ হওয়ায় ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি গত বৃহস্পতিবার মারা যান।
ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাতেই ঢাকায় প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও ছায়ানট ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। গতকাল শুক্রবার তার মরদেহ ঢাকায় আনা হয়েছে এবং আজ জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠিত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার মনে করছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ওসমান হাদির মৃত্যু এবং সংবাদমাধ্যমে হামলার ঘটনা ফেসবুক ব্যবহার করে সহিংসতা ছড়ানোর ধারাবাহিকতার অংশ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি ফেসবুকে প্রকাশ্যে হাদির মৃত্যুকে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান দিয়েছেন। এসব প্রকাশের পরপরই কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর মারাত্মক হুমকি তৈরি করে।
সরকার ও নাগরিক সমাজের অনুরোধ সত্ত্বেও সহিংসতা উসকে দেওয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে মেটা সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ফেসবুকে সহিংসতার সঙ্গে নাগরিকদের জীবন, গণতান্ত্রিক অধিকার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও দেশের স্থিতিশীলতা সরাসরি যুক্ত। তাই মেটাকে আহ্বান জানানো হয়েছে—বাংলাদেশ–সংক্রান্ত কনটেন্টের জন্য কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড কঠোরভাবে, দ্রুত ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী প্রয়োগ করা; বাংলা ভাষাভিত্তিক কনটেন্ট মডারেশন, অনুভূতি বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক পর্যালোচনা জোরদার করা; এবং সহিংসতা, ভয়ভীতি বা সংগঠিত ক্ষতির আহ্বান জানানো কনটেন্টের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
সরাসরি রিপোর্টের আহ্বান:
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাস ও সহিংসতার আহ্বান জানানো যেকোনো পোস্ট সরাসরি রিপোর্ট করা যাবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি শনিবার (আজ) থেকে সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপ (০১৩০৮৩৩২৫৯২) ও ই–মেইল (notify@ncsa.gov.bd
) এর মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ করবে।

Comments
Comments