[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ভোটকে সামনে রেখে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

প্রকাশঃ
অ+ অ-
বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। তার অংশ হিসেবে ২৭২ আসনে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও কর্মশালা শনিবার শেষ হয়েছে। যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, সেগুলোতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বাগেরহাট জেলার চারটি আসনে প্রার্থিতা প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হয়েছে। এই আসনগুলোর প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থীরা গতকালের কর্মশালায় অংশ নেন।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বাগেরহাটের দুটি আসনে হিন্দু সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী করা হচ্ছে। বাগেরহাট-১ আসনে মনোনীত হয়েছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মহাসচিব ও মতুয়া সমাজ ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল, আর বাগেরহাট-৪ আসনে মনোনীত হয়েছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বাংলাদেশ শাখার সভাপতি সোমনাথ দে।

উল্লেখ্য, বাগেরহাট-৪ আসনের সোমনাথ দে ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন, ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ২৯ আগস্ট তিনি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন এবং এবার বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া) আসনে প্রার্থী করা হয়েছে জেলা বিএনপির নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে। এছাড়া চট্টগ্রাম-৪ আসনে কাজী সালাউদ্দিনের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন আসলাম চৌধুরী।

দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত তিন পর্বের কর্মশালায় নির্বাচনী প্রচারকৌশল ও রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির ঘোষিত ‘৩১ দফা’ এবং জনসম্পৃক্ত ‘৮ দফা’ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ হিসেবে ‘ফ্যামিলি কার্ড’, ‘হেলথ কার্ড’ ও ‘কৃষি কার্ড’কে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় কীভাবে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে, তাও প্রার্থীদের বোঝানো হয়েছে।

কর্মশালার সমাপনী দিনে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ধানের শীষ প্রতীকে মনোনীত সবাইকে আমি সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাই। এ জন্য আমি ফুলের মালা নিয়ে অপেক্ষায় থাকব। ধানের শীষের সবাইকে বিজয়ী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’

নির্বাচনের দিন কেন্দ্রভিত্তিক ব্যবস্থাপনা সুসংগঠিত করতে প্রার্থীদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, প্রতিটি আসনের জন্য একজন ‘ইলেকশন এজেন্ট’, পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম দুজন ব্যক্তি এবং একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের বিস্তারিত তথ্য (ছবি, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ও ঠিকানা) জমা নেওয়া হয়েছে।

কর্মশালায় অংশ নেওয়া লক্ষ্মীপুর-১ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও পূরণ থেকে শুরু করে জমা দেওয়া এবং ভোটের দিনে একজন প্রার্থীর করণীয় বিষয়গুলো কর্মশালায় বোঝানো হয়েছে, যা খুবই প্রয়োজন ছিল।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জিয়াউদ্দিন হায়দার, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন নেওয়াজ হালিমা আর্লি ও আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী।

দলীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার কাজও অনেকটা গুছিয়ে এনেছে বিএনপি। ১৭, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিন জোটের পাঁচজন শীর্ষ নেতার আসন নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা হলেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২), গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক (ঢাকা-১২), জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার এবং এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।

তবে আসন বণ্টন নিয়ে শরিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-১২ আসন (তেজগাঁও-হাতিরঝিল) নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা মূলত ঢাকা-৮ আসন চেয়েছিলাম। সেখানে বিএনপির সিনিয়র নেতা মির্জা আব্বাস নির্বাচন করবেন। বিকল্প হিসেবে আমরা ঢাকা-১২ আসন চেয়েছি। এ নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।’

অন্যদিকে আসন সমঝোতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে আমরা প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। যুগপৎ আন্দোলনের সময় বিএনপির প্রতিশ্রুতি এবং জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়গুলো আলোচনা করেছি। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি।’

একইভাবে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব অসুস্থ থাকায় তাঁর স্ত্রী তানিয়া রবের জন্য লক্ষ্মীপুর-৪ আসন চাওয়া হয়েছে। জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন জানিয়েছেন, বিএনপি আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে শরিকদের আসনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। যেসব আসনে সমঝোতা হবে, সেখান থেকে বিএনপির দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করা হবে এবং শরিকেরা নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করবেন। ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও গণফোরামকে আপাতত কোনো আসন না দিলেও ক্ষমতায় গেলে মূল্যায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন