ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় পালাতে গিয়ে ৫টি যানবাহন বদলান দুই সন্দেহভাজন
![]() |
| রিকশায় গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদি। শুক্রবার দুপুরে শরিফ ওসমান হাদিকে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় গুলি করা হয় | ছবি: ফেসবুক থেকে |
শরীফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলায় জড়িত দুই সন্দেহভাজন ফয়সল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ ঢাকা থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যেতে পাঁচ দফা যানবাহন বদলান। তাঁরা মোটরসাইকেলের নিবন্ধন নম্বর প্লেট বদলে ভুয়া নম্বর প্লেট ব্যবহার করেন। পাশাপাশি মুঠোফোন ও সিম ফেলে দেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রের দাবি, দুই সন্দেহভাজন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।
রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় গত শুক্রবার চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করে। তিনি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাদিকে গতকাল সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে।
হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় গত রোববার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ জাবের বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ফয়সলসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। পরে মামলাটি ডিবিতে (ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ) হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনা ও অর্থের জোগানদাতা পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
সেখান থেকে তিনজন যুবক এসে তাঁদের দুজনকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যান। রাত আড়াইটার ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তাঁরা ভারতে ঢুকে পড়েন।
পুলিশ জানিয়েছে, ফয়সল নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আলমগীর যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
হাদির ওপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ফয়সলের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, ফয়সলের বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে আবদুল হান্নান এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তার অভিযোগে সঞ্জয় চিসিম ও সিমিরন দিও।
এদের মধ্যে গতকাল সামিয়া, সিপু ও মারিয়ার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
অটোরিকশা চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। সূত্র বলছে, চালক জানিয়েছেন আমিনবাজারে ফয়সল ও আলমগীরের জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন এক তরুণী (ফয়সলের বান্ধবী মারিয়া)।
এদিকে ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সল করিম মাসুদের সহযোগী মো. কবিরকে গত রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গতকাল সোমবার র্যাবের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। র্যাব জানায়, ঘটনার কয়েক দিন আগে কবির মাসুদ করিমের সঙ্গে বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন।
হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে হাদি ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য ও বিশ্লেষণ তুলে ধরছিলেন। এ কারণে তাঁকে একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
মামলাটির তদন্ত করছে ডিবির মতিঝিল বিভাগ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হত্যাচেষ্টায় সরাসরি অংশ নেন ফয়সল ও আলমগীর শেখ। তবে নেপথ্যে কারা ছিলেন, সে বিষয়ে এখনো পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। হাদির ব্যবহৃত মুঠোফোন এখনো উদ্ধার হয়নি।
ময়মনসিংহে একটি সেতু এলাকা থেকে আরেকটি গাড়ি নিয়ে হালুয়াঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করেন তাঁরা। প্রাইভেটকারটি হালুয়াঘাটের ধারাবাজারের একটি পেট্রল পাম্পে গিয়ে থামে। সেখান থেকে তিনজন যুবক এসে তাঁদের দুজনকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যান। রাত আড়াইটার ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তাঁরা ভারতে ঢুকে পড়েন।
মোটরসাইকেলে নম্বর প্লেট পরিবর্তন
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হামলার আগের রাতে ১১ ডিসেম্বর ফয়সল ও আলমগীর সাভারের গ্রিন জোন রিসোর্টে ছিলেন। রাত দুইটার দিকে ফয়সলের বান্ধবী মারিয়া তাঁর ছোট বোনকে নিয়ে সেখানে যান। তাঁরা একসঙ্গে গল্প করেন। মারিয়া জানান, তাঁর সঙ্গে ফয়সলের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ১২ ডিসেম্বর সকালে ফয়সল ও আলমগীর একটি মোটরসাইকেলে সাভার থেকে ঢাকায় আসেন। এরপর তাঁরা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ফয়সলের বোনের বাসায় যান এবং সেখানে গ্যারেজে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট পরিবর্তন করেন। কিছুক্ষণ সেখানে থাকার পর তাঁরা অটোরিকশায় করে আমিনবাজারে যান।
অটোরিকশাচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। সূত্র জানায়, চালক বলেছেন, আমিনবাজারে ফয়সল ও আলমগীরের জন্য একটি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন এক তরুণী, যিনি ফয়সলের বান্ধবী মারিয়া।
সূত্রের দাবি, আমিনবাজারেই ফয়সল ও আলমগীর মুঠোফোন ও সিম ফেলে দেন। এরপর তাঁরা আমিনবাজার থেকে কালামপুর হয়ে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক ধরে ময়মনসিংহে যান। ময়মনসিংহে একটি সেতু এলাকা থেকে আরেকটি গাড়িতে করে হালুয়াঘাটের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রাইভেটকারটি হালুয়াঘাটের ধারাবাজার এলাকার একটি পেট্রল পাম্পে গিয়ে থামে। সেখান থেকে তিনজন যুবক এসে তাঁদের দুজনকে মোটরসাইকেলে তুলে হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যান। রাত আড়াইটার দিকে ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তাঁরা ভারতে ঢুকে পড়েন।
এদিকে গতকাল সকালে ময়মনসিংহের ৩৯ বিজিবির সেক্টর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার সরকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাদিকে গুলি করার ঘটনায় জড়িতরা হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছেন কি না, সে বিষয়ে তারা এখনো নিশ্চিত নন।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবর্তন করা নম্বর প্লেট এবং আসল নম্বর প্লেট দুটিই পাওয়া গেছে। এখন মোটরসাইকেলের প্রকৃত মালিককে খুঁজছে পুলিশ। এদিকে মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আবদুল হান্নান রোববার আদালতে বলেন, তাঁকে মোটরসাইকেলের বিক্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গেলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে। তিনি জানান, তিনি অনেক আগেই মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে দিয়েছেন।

Comments
Comments