[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

দোষ বিয়ারিং প্যাডের নয়, যারা লাগিয়েছে কিংবা বুঝে নিয়েছে, তাদের: ডিএমটিসিএল এমডি

প্রকাশঃ
অ+ অ-
উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ। আজ সোমবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   

ঢাকার মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়া যাত্রা শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে একটি বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে একজন পথচারীর মৃত্যু হয়। এবার ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) নতুন করে নিরাপত্তা নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, 'মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই আমরা সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত সম্ভব তা করা হবে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এই অডিট করানো হবে। ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই এটি হবে। ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই আবেদন করেছে। সেফটি অডিটের জন্য আমরা খুব শিগ্রই টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাব।' 

এক বছর আগে ঢাকার মেট্রোরেলের স্তম্ভের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে আরেকটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে একজন পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকে।

বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এর নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি ফারুক আহমেদ বলেন, 'বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎভাবে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন, আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যা হতে পারে, সেটা বলতে পারি—ডিজাইন ত্রুটি হতে পারে। যে জিনিস বসানোর কথা ছিল, তা ঠিকমতো বসানো হয়নি। ঠিকাদার হয়তো ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করেনি। যে পরামর্শককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিকভাবে বুঝে নেনি। এই চারটি কারণে হতে পারে, অথবা এর মধ্যে কোনো একটির কারণে ঘটেছে।' 

তিনি আরও বলেন, 'দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং ঠিকমতো লাগানো হয়েছে কি না, সেটি দেখার বিষয়। যার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কি না—সেটা এখন তদন্তে দেখা হবে।' 

এসব কাজ ঠিকমতো বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে, জানিয়ে ডিএমটিসিএলের এমডি ফারুক আহমেদ বলেন, 'প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে পরামর্শক বিষয়গুলো বুঝে নেবেন। আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছিল। কেন তা হয়েছে, তার উত্তর আমি দিতে পারব না। দুর্ঘটনা যেসব অংশে ঘটেছে, সেগুলোতে অনেক ত্রুটি আছে। ফলে এখনও সবকিছু আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারিনি।' 

ফারুক আহমেদ বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারানোর সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। তবে ডিএমটিসিএল সেই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ এখনো অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, ঠিকাদারকে তা মেরামত করতে হবে। এজন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সব পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরেজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি পাওয়া গেছে, সেগুলো পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে জানানো হয়েছে। ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।' 

চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল বলে দাবি করে ফারুক আহমেদ বলেন, 'প্রকল্প চালুর আগে ন্যূনতম ছয় থেকে নয় মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল। তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে সম্পূর্ণ হবে—এ ধরনের ধারণা ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগের পর ছয় থেকে সাত বছর সময় লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে তিন বছর যায়।' 

তিনি আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের লক্ষ্য কী ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয়।

নতুন মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প এখন মুখ থুবড়ে পড়ছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে ফারুক আহমেদ বলেন, 'মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্য, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে সেটা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।'  

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন