সরকারের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে
![]() |
| জরুরি সংবাদ সম্মেলন কথা বলছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও মোটামুটি এক ধরনের ঐক্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সরকারের ভুল পদক্ষেপ এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা সেই ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে বলে দাবি করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, এতে চব্বিশের অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও সংস্কারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-এর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির মহাসচিব আবু ইউসূফ সেলিমসহ অন্যান্য নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, জুলাই সনদ এবং সনদের আইনি ভিত্তি হিসেবে গণভোটকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায় রয়েছে। এই অচলাবস্থার মধ্যে ঐকমত্য তৈরির দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দিয়ে সরকার দায়মুক্তির চেষ্টা করছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা আরও বলেন, অচলাবস্থা নিরসনের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। গণভোটের তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার তা না করে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে এই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে, ফলে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মনোভাব থেকে সরে এসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অচলাবস্থা নিরসন করতে হবে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়মতান্ত্রিকভাবে করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্বাচনের সময় মতো আয়োজন না হলে দেশ নিরাপত্তা-সংকটের মুখে পড়বে। নির্বাচন যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে মনে রাখতে হবে, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করা না হলে দেশ ভয়াবহ নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জুলাই সনদ প্রণয়নের সময় ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো যেভাবে লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ঐকমত্য কমিশন পরবর্তীতে পরিবর্তন করেছে।
বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত সনদ এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার মধ্যে নীতিগত পার্থক্য রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। যদিও ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের পক্ষ থেকে আগে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে কোনো বিষয় চাপিয়ে দেওয়া হবে না, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর তারা সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এটা একদিকে প্রতারণার শামিল, অন্যদিকে সরকারের স্বৈরাচারী মানসিকতার প্রকাশ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন