[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধের কাজ বন্ধ, বালু নিয়ে দ্বন্দ্ব

বালু সরবরাহ নিয়ে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
প্রকাশঃ
অ+ অ-
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদম রসুল এলাকায় বাঁধের জন্য আনা বালুর স্তূপ। সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীতে ৫০৪ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার’ কারণে ছয়টি কাজের মধ্যে তিনটিতে এখনও কাজ শুরু হয়নি। দুটি অংশে কাজ শুরু হলেও বালু, সিমেন্টসহ মালামাল সরবরাহে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বাধার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বালু ও সিমেন্ট সরবরাহ নিয়ে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের কয়েকটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এতে শ্রমিকদের ওপর মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, পরিস্থিতি না বদলালে কাজ এগানো সম্ভব নয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)’ের জন্য মোট ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। এতে বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। আনোয়ারা অংশে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই, কিন্তু বাঁশখালীতে কাজ বাধাগ্রস্ত।

বাঁশখালীর চারটি এলাকায় ৫০৪ কোটি টাকার নির্মাণকাজের বরাদ্দ রয়েছে। এসব এলাকায় ছয়টি অংশে কাজ ভাগ করা হয়েছে। পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একক বা যৌথভাবে কাজ করছে। বাঁশখালী অংশে রয়েছে ৬.৪১ কিলোমিটার বাঁধ ও ঢালু এবং ১.১ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ।

গত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৫-৭ মাস পেরিয়েও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩ শতাংশের কম।

পাউবোর নথিপত্রে বলা হয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক সমস্যা নির্মাণকাজে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এছাড়া পণ্য পরিবহন সমস্যার সঙ্গে বালু উত্তোলন বাধা ও লবণ চাষের কারণে ব্লক তৈরির মাঠ না পাওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাঁশখালী অংশের ছয়টি কাজের মধ্যে দুটি কাজ পেয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (পিডিএল)। এর মধ্যে উপজেলার খানখানাবাদের ১,৩০০ মিটার বাঁধ ও ঢাল সংরক্ষণের কাজ করছে যৌথভাবে ওয়েস্টার্ন-পিডিএল। ছনুয়ার ২,৮০০ মিটার কাজ করছে পিডিএল-আরএফএল।

পাউবো ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, এই দুটি অংশেই বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে পিডিএল বাধার মুখে পড়েছে। ছনুয়ায় ব্লক নির্মাণের জন্য চট্টগ্রামের বাইরে থেকে শ্রমিক আনা হয়েছিল।

কিন্তু রাতের আঁধারে তাঁদের ওপর মারধর করা হয়। খানখানাবাদের শ্রমিকদেরও হুমকি দেওয়া হয়। এরপর সব শ্রমিক চলে যান। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এসব ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

নির্মাণকাজে বড় প্রতিবন্ধকতা এসেছে বালু সরবরাহ নিয়ে। বিএনপির সহযোগী সংগঠনের দুই পক্ষের মধ্যে এই বিষয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, বালু সরবরাহ নিয়ে মেসার্স থ্রি পয়েন্ট ও তালুকদার ট্রেডিংয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।

থ্রি পয়েন্টের অংশীদাররা হলেন চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আরিফ এবং চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম। অভিযোগ রয়েছে, তাদের পেছনে আছেন খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সিকদার। জানতে চাইলে তিনি সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন।

অপর পক্ষে তালুকদার ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী হলেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ কাইদুল ওয়াদুদ।

থ্রি পয়েন্টের অংশীদার রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা কার্যাদেশ পেয়েছি এবং কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী বালু সরবরাহ করছি। কিন্তু কাইদুল ওয়াদুদ, আশরাফ ও শাহেদ নামের কয়েকজন ছেলে কার্যাদেশ না পাওয়ার পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বালু দিতে চাপ দিচ্ছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজি হয়নি, এরপরও তারা প্রভাব খাটিয়ে বালু খালাস করতে চায়, যা অরাজকতা তৈরি করেছে।’

তালুকদার ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ কাইদুল ওয়াদুদ দাবি করেছেন, তাঁরা বালু সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক মাস ধরে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বালু নিচ্ছিল, যা লবণপানি দিয়ে খালাস করা হচ্ছিল।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল অভিযোগটি ভিত্তিহীন দাবি করেছেন। তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন, বাঁধ নির্মাণের জন্য বালু, পাথর, রড, সিমেন্টসহ সব ধরনের মালামাল খালাস করতে গেলে নানাভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কিছু সরবরাহকারী বালু ও ইট সরবরাহ করলেও মান কম হওয়ায় তা গ্রহণ করতে চাপ দেয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাইরের সরবরাহকারীর পণ্য ব্যবহার করলে স্থানীয় পক্ষ আবার বাধা দেয়। স্থানীয় কয়েকটি পক্ষের অন্তঃকোন্দলের কারণে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সমস্যা সমাধান না হলে প্রকল্প সময়মতো শেষ করা কঠিন হবে।

খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদম রসুল এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বালুর বিশাল স্তূপ রাখা আছে, কিন্তু ব্লক তৈরির কাজ বন্ধ রয়েছে।

জানতে চাইলে খানখানাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব লোকমান হাকিম বলেন, 'বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ।' 

পাউবো সূত্র জানায়, বাঁশখালীর ছয়টি কাজের মধ্যে বর্তমানে শুধুমাত্র সাধনপুর অংশে কাজ চলছে। বাকি পাঁচটিতে কাজ হচ্ছে না।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, 'বাঁশখালী অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণে নানা ধরনের বাধা আসছে। স্থানীয় কয়েকটি পক্ষ বালু, সিমেন্ট ও শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নানাভাবে হয়রানি করছে এবং হুমকি দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কাজ সময়মতো শেষ হবে না।' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন