জয়পুরহাটে আলুতে ২৯৩ কোটি টাকা ক্ষতি
• বর্তমানে হিমাগারে ১৩ লাখ ৮১ হাজার বস্তা আলু মজুত আছে। এর অর্ধেক অবশ্য বীজ আলু।
• প্রতি কেজি আলুতে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ১৬ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে।
![]() |
| হিমাগারের শেডে আলু বাছাই করছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি জয়পুরহাট জেলার কালাইয়ে এম ইশরাত হিমাগারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ভালো লাভের আশায় জয়পুরহাটের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এবার হিমাগারে আলু রেখেছিলেন। কিন্তু বাজারে দাম না থাকায় উল্টো তাঁরা প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এতে জেলায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে গভীর হতাশা দেখা দিয়েছে।
আলু ব্যবসায়ী, কৃষক ও হিমাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু উৎপাদন থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ২৪–২৫ টাকা। সরকার হিমাগার গেটে প্রতি কেজি আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও সেই দামে কোনো আলু বিক্রি হচ্ছে না। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৯–১০ টাকায়। এতে প্রতি কেজিতে ১৬ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে।
বর্তমানে হিমাগারে ১৩ লাখ ৮০ হাজার ৬৫০ বস্তা আলু মজুত আছে। প্রতি বস্তায় গড়ে ৮৫০ টাকা লোকসান ধরা হলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১১৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এর আগে হিমাগার গেট থেকে ২০ লাখ ৬৪ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে। তখন লোকসান হয় প্রায় ১৭৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ক্ষতি দাঁড়ায় প্রায় ২৯৩ কোটি টাকা।
ক্ষেতলাল উপজেলার ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান মিলন বলেন, ‘আলু উৎপাদন থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ২৪–২৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৯–১০ টাকায়। এতে প্রতি কেজিতে ১৬ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে। আলু আমার তহবিল খেয়ে ফেলেছে।’
কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের আলু ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম আকন্দ বলেন, ‘৪ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছিলাম। এতে আমার ৫৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। আলু বিক্রি করে মাত্র ৫ লাখ টাকা পেয়েছি। আমার প্রায় ৫১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় জানায়, গত মৌসুমে জয়পুরহাট জেলায় ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে জেলার ২১টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার বস্তা আলু। ১৫ নভেম্বর আলু সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হবে।
কালাই পৌর শহরের এম ইসরাত হিমাগারের ব্যবস্থাপক আবু রায়হান বলেন, মৌসুমের শুরুতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে ২ লাখ ৩০ হাজার বস্তা আলু রাখেছিলেন। ১৫ নভেম্বর সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হবে। এখনো হিমাগারে ৭৩ হাজার বস্তা আলু রয়েছে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার বস্তা আলু বের হওয়ার কথা, কিন্তু তা হচ্ছে না।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হিমাগারগুলোতে ৮২ হাজার মেট্রিক টন, অর্থাৎ ১৩ লাখ ৮০ হাজার বস্তা আলু ছিল। এর অর্ধেক বীজ আলু। সরকার ২২ টাকা কেজি দরে আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিলেও তা কার্যকর হয়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর চাহিদার চেয়ে আলুর উৎপাদন বেশি হয়েছে। তাই কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু সংরক্ষণ করেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সরকার ন্যূনতম মূল্য ২২ টাকা কেজি নির্ধারণ করলেও তা বাজারে কার্যকর হয়নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন