[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ঋত্বিকের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন বাড়ির ধ্বংসস্তূপেই

প্রকাশঃ
অ+ অ-
রাজশাহী নগরের মিঞাপাড়ায় পৈতৃক বাড়ির ধ্বংসস্তূপে ঋত্বিক কুমার ঘটকের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

যেখানে থাকার কথা ছিল উৎসবের রঙ, সেখানে এখন শুধু ইটের স্তূপ আর আগাছার জঙ্গল। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের জন্মশতবার্ষিকীতে সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর মোমবাতির আলো জ্বলে উঠল।

রাজশাহীতে তাঁর গুঁড়িয়ে দেওয়া পৈতৃক ভিটায় দাঁড়িয়ে সাংস্কৃতিক কর্মীরা কিংবদন্তি এই নির্মাতার স্মৃতি রক্ষা এবং সেখানে আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানান।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির আয়োজনে রাজশাহীর মিঞাপাড়ায় ঋত্বিকের পৈতৃক বাড়ির ধ্বংসস্তূপে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

‘ঋত্বিক শতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটি’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত ও গণসংগীতের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়ির ইটের স্তূপে মোমবাতি প্রজ্বালন করে ঋত্বিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে রাতে ঋত্বিকের নির্মিত চলচ্চিত্র ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ প্রদর্শন করা হয়। ইটের স্তূপে উৎসবের ব্যানার, সিনেমাকর্মের পোস্টার এবং ঋত্বিকের পোর্ট্রেট টানানো হয়। সন্ধ্যায় ইটের স্তূপ মোমবাতিতে আলোকিত হয়।

ঋত্বিক ঘটক জীবনের শুরুর সময়টা রাজশাহীর এই পৈতৃক বাড়িতে কাটিয়েছেন। এখানে থাকাকালীন তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়াশোনা করেছেন। রাজশাহী কলেজ ও মিঞাপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে তিনি নাট্যচর্চা করেছেন এবং ‘অভিধারা’ নামে সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। এই সময় রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন বেগবান হয়। এই বাড়িতে থেকেছেন তাঁর ভাইঝি, বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মিঞাপাড়ার এই বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। অভিযোগ ওঠে পাশের রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ তখন দাবি করে, তাদের সাবেক কিছু শিক্ষার্থী এই কাজ করেছেন। তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি।

বাড়িটির ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, ১৯৮৯ সালে বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি সরকার কলেজকে ইজারা দেয়। ২০১৯ সালে এর একাংশ ভেঙে সাইকেল গ্যারেজ তৈরির চেষ্টা হয়, যা দেশে প্রতিবাদের ঝড় তোলে। ২০২০ সালে জেলা প্রশাসন বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। এরপরও প্রতিশ্রুতি শুধু আশ্বাসেই সীমিত থেকেছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নগরের মিঞাপাড়ার এই বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। অভিযোগ ওঠে পাশের রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ তখন দাবি করে, তাদের সাবেক কিছু শিক্ষার্থী এ কাজ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা ঋত্বিকের স্মৃতি রক্ষায় পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক ভিটা ভাঙার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। পৈতৃক বাড়ির টিকে থাকা অংশের (০.১৬০৩ একর) জমি সংরক্ষণ করে সেখানে ভবিষ্যতে ঋত্বিকের নামে চলচ্চিত্র কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ওই জমি মুক্ত ঘোষণা করতে হবে।

রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ওই জমি ১৯৮৭-৮৮ সালে সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ে ইজারা পায়। বক্তারা বলেছেন, এ ইজারা পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং বাতিল করে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি, রাজশাহী বা জেলা প্রশাসন কর্তৃক স্থায়ী সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক নিবাসের অবশিষ্ট অংশ (০.১৬০৩ একর) চারপাশে উচ্চ সীমানাপ্রাচীর দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে ‘ঋত্বিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখা সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে। এই অংশে প্রবেশের জন্য বড় রাস্তার পাশে একটি গেটও তৈরি করতে হবে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজশাহী নগরের মিঞাপাড়ায় ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

গতকালের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহসান কবীর লিটন। তিনি বলেন, ‘ঋত্বিক ঘটকের রাজশাহীতে কাটানো দিনগুলো তাঁর সৃজনী জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। পদ্মা নদী, শহরের পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তাঁর ভাবনা ও চলচ্চিত্রে বারবার প্রতিফলিত হয়েছে। অথচ তাঁর জন্মভূমিতেই স্মৃতিচিহ্ন অরক্ষিত, এটি আমাদের জন্য লজ্জার।’

অনুষ্ঠানে ফেস্টিভ্যাল ডিরেক্টর আতিকুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন। এছাড়া আরও বক্তব্য দেন ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দুলাল ভৌমিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আমিরুজ্জামান, প্রবীণ চলচ্চিত্র কর্মী নান্নু মাহমুদ, চলচ্চিত্রকার রাসেল রানা (দোজা), রুদ্র কাওসার এবং রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুয়েল কিবরিয়া।

ফেস্টিভ্যাল কো-অর্ডিনেটর নাদিম সিনার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগীত পরিবেশন করে ‘সন্নিধি সংগীত নিকেতন’।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন