ফরিদপুরে বাবার ঐতিহ্য ধরে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন দুই নারী
![]() |
| ফরিদপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া শামা ওবায়েদ (বাঁয়ে) ও ফরিদপুর-৩ আসনে মনোনয়ন পাওয়া নায়াব ইউসুফ | ছবি: সংগৃহীত |
বাবার রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারায় বিএনপির রাজনীতিতে এসেছিলেন শামা ওবায়েদ ও নায়াব ইউসুফ। দুজনই এবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকায় দলের কার্যালয়ে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৩৭ জনের নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যে ১০ জন নারী প্রার্থী।
ফরিদপুরের চারটি আসনের মধ্যে বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ আসন ছাড়া বাকি তিনটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ এবং ফরিদপুর সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ মনোনয়ন পেয়েছেন।
মনোনয়ন পাওয়া দুই নারীর মধ্যে নায়াব ইউসুফ নতুন মুখ। তিনি কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নায়াব ইউসুফ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী না হলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাবা, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির সাবেক সহসভাপতি প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের ডামি প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিয়েছিলেন। পরে বাবার সমর্থনে নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। সেই সময় থেকেই তাঁর রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া শুরু।
অন্যদিকে শামা ওবায়েদ বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগ ফরিদপুরের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। তিনি বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কে এম ওবায়দুর রহমানের মৃত্যুর পর রাজনীতিতে আসেন।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন পাওয়ার আগেই এই দুই নারী নিজ নিজ এলাকায় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তাঁরা নিয়মিত সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে কে এম ওবায়দুর রহমান ফরিদপুর-২ আসন থেকে পাঁচবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চারবার নির্বাচিত হন। এর মধ্যে একবার (১৯৭৩) আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এবং তিনবার (১৯৭৯, ১৯৯৬ ও ২০০১) বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হন। ১৯৯১ সালে তিনি জনতা পার্টির প্রার্থী হিসেবে জাহাজ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
ওবায়দুর রহমান একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বহুবার কারাবন্দী ছিলেন। ৬৬ বছর বয়সে ২০০৭ সালের ২১ মার্চ তিনি মারা যান।
শামা ওবায়েদ বলেন, ‘বাবা বৃহত্তর ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক গণতান্ত্রিক। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, বহুবার জেল খেটেছেন। তাঁর জীবন কেটেছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তারপরও তিনি সব সময় এলাকার মানুষের সঙ্গে থেকেছেন, তাঁদের চাকরি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। নগরকান্দার উন্নয়নের ৯০ শতাংশই হয়েছে তাঁর হাত ধরে।’
শামা ওবায়েদ আরও বলেন, ‘বাবার গণতান্ত্রিক আচরণ ও নীতি সব সময় আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর জীবন ছিল মানুষের জন্য, নিজের কথা কখনো ভাবেননি। আমি তাঁর রেখে যাওয়া কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে চাই। বাবার আদর্শ নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। বাবা জাতীয়তাবাদের আদর্শের মানুষ শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়াকে অনুসরণ করতেন। সেই পথেই আমি কাজ চালিয়ে যেতে চাই।’
নায়াব ইউসুফের বাবা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। মোট সাতটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি, এর মধ্যে পাঁচবার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে। ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও ১২ জুন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন। জোট গঠনের কারণে ২০০৮ সালে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কলস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন, কিন্তু জয় পাননি। ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়েও পরাজিত হন। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর ৮০ বছর বয়সে মারা যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ।
নায়াব ইউসুফ বলেন, তাঁর বাবা এ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য ও তিনবার মন্ত্রী ছিলেন। জিয়াউর রহমানের হাত ধরে তিনি বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন এবং দলকে শক্তিশালী করেন। ফরিদপুরে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ তাঁরই ছিল। দাদা ও বড় বাবার নামে বিভিন্ন চরে যেসব স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেগুলোর কারণে এলাকার মানুষ শিক্ষিত হয়েছে।
নায়াব ইউসুফ জানান, তিনি শিক্ষা, যোগাযোগ ও এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে চান। তারেক রহমানের নির্দেশে দলের কাজ করে যাবেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে আছি এবং থাকব। মানুষ যা চায়, সেই লক্ষ্যেই কাজ করব। ফরিদপুরকে একটি মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন