[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

গণভোট: রাজনৈতিক দলের কোর্টে বল, রেফারি হবেন কে?

প্রকাশঃ
অ+ অ-
স্বাক্ষর করার পর জুলাই জাতীয় সনদ তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ১৭ অক্টোবর  বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় | গ্রাফিকস: পদ্মা ট্রিবিউন 

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে চলমান বিতর্কের সমাধান রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছে। সরকারের নির্দেশ, দলগুলো যদি সাত দিনের মধ্যে ঐকমত্যে না পৌঁছায়, তাহলে সরকার নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে।

সরকারের এই ঘোষণায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া মিশ্র। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তারা বলছে, দলগুলোর মধ্যে আলোচনায় রেফারি বা মধ্যস্থতার অভাব হতে পারে। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করছে, সরকার এই দায়িত্ব দলগুলোর ওপর ছেড়ে নিজেদের দায় এড়াতে চাইছে।

সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সংবাদ সম্মেলনে সরকারের অবস্থান জানান। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আসিফ নজরুল বলেন, 'উপদেষ্টা পরিষদ গণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে। আমরা বলছি, যত দ্রুত সম্ভব আলোচনায় বসে আগামী সাত দিনের মধ্যে একীভূত প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠান।' 

তিনি আরও বলেন, 'এটি কোনো আল্টিমেটাম নয়, বরং যৌথভাবে লড়াই করা দলগুলোর প্রতি আন্তরিক অনুরোধ। তারা একসঙ্গে লড়েছে, এবার আবার একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।' 

তবে সময়সীমার মধ্যে ঐকমত্য না হলে সরকার 'নিজ পথে এগোবে' বলেও জানান তিনি।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে মূলত তিনটি বিষয় আলোচ্য ছিল— জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা, জাতীয় গণভোট আয়োজন, এবং এর বিষয়বস্তু নির্ধারণ।

বৈঠকে দলগুলো ও ঐকমত্য কমিশনের অবদানের প্রশংসা করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবে গণভোটের সময় ও বিষয়বস্তু নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যকে তারা উদ্বেগজনক মনে করেছে।

ঐকমত্য কমিশন আগে জানিয়েছিল, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বা একই দিনে গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। কিন্তু বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপি ভিন্ন ভিন্ন সময়সূচি দাবি করায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, 'দীর্ঘ আলোচনা হলেও মতপার্থক্য রয়ে গেছে। কখন গণভোট হবে এবং এর বিষয়বস্তু কী হবে, সেটি নিয়েই বিভেদ তৈরি হয়েছে।' 

তিনি আরও বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে আর বিলম্বের সুযোগ নেই। সরকার ইতোমধ্যেই একাধিক বৈঠক করেছে, এবার দলগুলোকেই একত্রে প্রস্তাব দিতে হবে।' 

সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতিতে অটল আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নজরুল বলেন, 'আর বিলম্বের অবকাশ নেই। উপদেষ্টা পরিষদ বলেছে— আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে।'

তিনি যোগ করেন, 'রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তই সরকারের জন্য গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভিত্তি হবে।' 

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফওজুল কবির খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

সরকারের আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'সরকারকে দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার এই দায়িত্ব দলগুলোর ওপর ছেড়ে দায় এড়াচ্ছে। সংস্কার বাধাগ্রস্ত ও নির্বাচন বানচালের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা হতাশাজনক। সরকার ব্যর্থ হলে তা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।' 

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামি উপদেষ্টা পরিষদের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে মতপার্থক্য দূর করতে পারবে।

তবে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, আলোচনায় ‘রেফারির অভাব’ দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, 'আমরা উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত স্বাগত জানাই। তবে যদি তারা মনে করে দায়িত্ব এখানেই শেষ, সব কিছু দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেয়, তাহলে ‘রেফারির’ ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব, তবে আশা করি প্রধান উপদেষ্টা আগের মতো এবারও রেফারির ভূমিকা রাখবেন।' 

সোমবার পল্টনের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ব্রিফিংয়ের পর আটটি সমমনা দলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।

তবে প্রতিবেদনের লেখা পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আহ্বানে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন