গাজায় গণহত্যা ও ফ্লোটিলা হামলার নিন্দা
গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-তে ইসরায়েলের হামলা ও গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর দেশটির সহিংসতার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মানবাধিকার, পরিবেশ, নারী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, ক্রীড়া ও স্বেচ্ছাসেবীসহ বিভিন্ন অঙ্গনের ৭০টির বেশি সংগঠনের কর্মী ও সাধারণ মানুষ। তারা ফিলিস্তিনবাসীর মুক্তি ও স্বাধীনতার আওয়াজ তুলেছেন। এছাড়া নৌবহরে গ্রেপ্তার হওয়া মানবাধিকারকর্মীদেরও অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটায় জাতীয় সংসদের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ সিনার্জি অ্যালায়েন্স’ আয়োজিত মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল থেকে এই প্রতিবাদ ও দাবি জানানো হয়। অনুষ্ঠানে কোনো নির্দিষ্ট সভাপতি বা বক্তা ছিলেন না।
![]() |
‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’য় ইসরায়েলের হামলা ও গাজায় দেশটির চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ৭০টি সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা সুমুদ ফ্লোটিলার নিরাপত্তা ও ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানান। তারা গাজায় চলা গণহত্যা ও ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার পাশাপাশি ফিলিস্তিনকে উপনিবেশমুক্ত করে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠারও আহ্বান জানান।
মানববন্ধন শুরু হয় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ পাশের ফুটপাতে। আয়োজক বাংলাদেশ ইয়ুথ সিনার্জি অ্যালায়ন্সের সমন্বয়কারী নয়ন সরকার বলেন, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা চলছে। ফিলিস্তিনি জনগণ অবরোধের কারণে অনাহারে ভুগছে। বিপন্ন মানুষের জন্য ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনসহ চারটি সংগঠন ৪৪টি দেশের ৫০০ নাগরিককে নিয়ে ৪০টি নৌযানে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছিল। আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় সেই নৌবহরে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়ে মানবাধিকারকর্মীদেরও গ্রেপ্তার করেছে।
কর্মসূচির শুরুতে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রতি শোক জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা প্রতিবাদী স্লোগান লেখা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ান। তারা ‘ফ্রিডম ফর প্যালেস্টাইন’, ‘জাস্টিস ফর অল’, ‘জেনোসাইড নো মোর’, ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’—এ ধরনের স্লোগান দেন।
প্রায় আধা ঘণ্টা মানববন্ধনের পর অংশগ্রহণকারীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ফার্মগেটের খামারবাড়ির সামনে গিয়ে আবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ গেটে শেষ হয়। পথিমধ্যে অনেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়ে এই প্রতিবাদে সংহতি দেখান।
মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা বিশ্ববিবেকের প্রতি আহ্বান জানান, ইসরায়েলের বর্বর গণহত্যা বন্ধ করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বরাবর ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটি কোনো ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নয়, বরং মানবিক কারণে—অমানবিক গণহত্যা বন্ধের আহ্বান নিয়ে তাঁরা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করছেন। তারা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশও করেছেন। বক্তাদের মধ্যে অনেকে সুমুদ ফ্লোটিলায় থাকা বাংলাদেশের আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল আলমের সুরক্ষার জন্যও অন্তর্বর্তী সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে অংশ নেন অনেক সাধারণ মানুষ। গুলশান থেকে আসা প্রবীণ গৃহবধূ ফেরদৌসী হোসেন ও তাঁর মেয়ে নুসাইবা হোসেন বলেন, তারা কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নয়, মানবিক সহানুভূতি থেকে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে এই সমাবেশে এসেছেন। তারা ফ্লোটিলার ঘটনা অনলাইনে অনুসরণ করছিলেন এবং কর্মসূচি জানার পরই অংশগ্রহণ করেন।
অনলাইনে খবর জেনে অংশ নেন পুরোনো গাড়ির সংগ্রাহক দিদারুল ইসলামও। তিনি তাঁর ১৯৭০ মডেলের ফক্সভাগেন গাড়ি ফিলিস্তিনের পতাকা দিয়ে সাজিয়ে প্রতিবাদী মিছিলে যোগ দেন। দিদারুল ইসলাম বলেন, তিনি কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে নয়, ব্যক্তিগতভাবে ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে এখানে এসেছেন।
এ উদ্যোগের সমন্বয়কারী নয়ন সরকার বলেন, গাজাবাসীর জন্য মানবিক ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি বাহিনী হামলা করার প্রতিবাদে তারা দ্রুত এই প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করেছেন। সবাই মানবিক কারণে এতে অংশ নিয়েছেন। তাই কোনো সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো: সেইভ ফিউচার বাংলাদেশ, প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন, ক্লাইমেট ফ্রন্টিয়ার, জুলাই মঞ্চ, রোড সেফটি মুভমেন্ট, বইবন্ধু, লিও ক্লাব অব ঢাকা ডায়নামিক, ফটো অ্যাফেয়ার্স, ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জমেকার, দুর্বার ইয়ুথ নেটওয়ার্ক, জাগ্রত তারুণ্য, বাংলাদেশি ফুটবল আরাশ, মিশন গ্রিন বাংলাদেশ, তিতুমীর কলেজ ফটোগ্রাফি ক্লাব, ধুনট ফটোগ্রাফি অ্যান্ড আর্ট ক্লাব, শান্তি সংঘ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন