জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াত
![]() |
| জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের | গ্রাফিকস: পদ্মা ট্রিবিউন |
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নভেম্বরের জন্য গণভোট চায় বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদের বিষয়ে গণভোট একসঙ্গে হওয়ার বিষয়ে কিছু দলের মত আছে। তবে আমরা বলেছি, এটি আলাদাভাবে নভেম্বরে হওয়া উচিত।’
আজ সোমবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনসহ অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে জামায়াতের প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। বৈঠকে গণভোট, প্রবাসী ভোট, পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে জামায়াত নেতারা মতামত তুলে ধরেন।
প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ এবং জামায়াত নেতা ও বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি জসিম উদ্দিন সরকার।
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘দেশে গণভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান। যদিও চূড়ান্ত হয়নি। এখনো রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে দুই ধরনের মত আছে। একটি হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদকে সাংবিধানিকভাবে ভিত্তি দেওয়ার জন্য গণভোট একসঙ্গে করার। আমরা বলেছি, না, এটি আলাদা হওয়া উচিত। কারণ দুই বিষয়ই ভিন্ন এবং আলাদা গণভোটের মাধ্যমে জনমত গ্রহণ করা জরুরি। আমরা জোর দিয়ে অনুরোধ করেছি, যদি জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়, এটি নভেম্বরে আলাদাভাবে হওয়া উচিত। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীসহ অনেক দল এটি চাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকতে পারে। প্রথমত, প্রতিটি দল নির্বাচনের সময়ে প্রতীকে বিজয়ের দিকে বেশি মনোযোগ দেবে। দ্বিতীয়ত, কোনো একটি এলাকায় নির্বাচন দখল হলে সংস্কারের ব্যালটও প্রভাবিত হবে। তাছাড়া, কোনো কারণে যদি কোনো এলাকায় নির্বাচন স্থগিত হয়, তাহলে গণভোটও স্থগিত হবে এবং ফলাফল আসবে না।
বৈঠকে এসব যুক্তি তুলে ধরেছেন জানিয়ে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সব শুনে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এটি সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে কমিশন তা বাস্তবায়ন করবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না।’
আলাদা ভোটে খরচ বাড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গণভোট খুব জটিল কোনো বিষয় নয়। এখানে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ব্যয় নেই। গণভোটের জন্য যে বাক্স কেনা হবে, সেটিই জাতীয় নির্বাচনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। বাড়তি খরচ বলতে শুধু কিছু ব্যালট, কালি ও যারা এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন তাদের খাবার, ভাড়া বাবদ কিছু খরচ হবে। এর বাইরে বেশি কিছু নয়। এটি জাতির জন্য বড় কোনো বিষয় হবে না।’
নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করলে সমস্যা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একই দিনে হলে সংস্কারের বিষয়টি গৌণ হয়ে যাবে। প্রতিটি দলের মনোযোগ জাতীয় নির্বাচনের দিকে বেশি থাকবে। সাধারণ ভোটার অনেকেই এক ভোট দেওয়ার পর আর অন্য ভোটের কথা ভাববে না। এ কারণে আমরা নভেম্বরে আলাদা গণভোটের জন্য কমিশনকে অনুরোধ করেছি।’
আতীতের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আগে অনেক গণভোট হয়েছে। ২১ দিনের ব্যবধানেও হয়েছে, আবার ১০ দিনের ব্যবধানেও। সুতরাং এটি সম্ভব। গণভোটে শুধু ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোট থাকবে।
প্রবাসীদের ভোট বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রবাসীদের ভোটের বিষয়ে দাবি জানিয়েছি। তাদের প্রধান সমস্যা ছিল জাতীয় পরিচয়পত্র। তবে নির্বাচন কমিশন বলেছে জন্মসনদের মাধ্যমে ভোটার হতে পারবেন। ভোট দেওয়ার প্রস্তুতিও তারা নিচ্ছে, আমরা তাতে সন্তুষ্ট।’
ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে তিনি বলেন, অক্টোবরের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছে জামায়াত। কমিশন বলেছে, ভোটার তালিকায় থাকা ছবিটিকে আরও স্পষ্ট করা হবে।
নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার দাবিও জানিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘সরকার লটারির মাধ্যমে নিয়োগ করবে। আমরা কমিশনকে অনুরোধ করেছি, এই পদ্ধতি অনুসরণ হোক।’
পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত ৫৪ বছরে ট্রাডিশনাল পদ্ধতি নির্বাচনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করেনি। বরং অসুস্থ নির্বাচন হয়েছে। পিআর সিস্টেমে হলে কেন্দ্র দখল বা দিনের ভোট রাতের সঙ্গে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। আমরা দুটো পদ্ধতির বিষয়েই বিবেচনার দাবি করেছি। পিআর পদ্ধতির ভাগ্য নির্ধারণের পর বাকি নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি হবে। তারা আমাদের বক্তব্য শুনেছেন।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন