‘মরিয়া প্রমাণ করা লাগবে আমরা অসুস্থ?’ আদালতে দীপু মনির প্রশ্ন
![]()  | 
| দীপু মনিকে সোমবার সকালে হাজতখানা থেকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন | 
বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির হন। এ সময় তিনি মাস্ক, হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরেছিলেন।
আদালতে আসার পর দীপু মনিকে আসামির কাঠগড়ায় রাখা হয়। তিনি মাথা নিচু করে ছিলেন। এরপর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিমের সঙ্গে তিনি কিছু কথা বলেন। পরে তার আইনজীবী গাজী ফয়সাল আদালতে উপস্থিত হন এবং দীপু মনির সঙ্গে কথা বলেন।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বিচারক এজলাসে প্রবেশ করেন। রাষ্ট্রপক্ষের একজন পুলিশ কর্মকর্তা দীপু মনিকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে যুক্তি দেন। এরপর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকীও রিমান্ডের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।
পিপি বলেন, 'গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হানিফ উড়ালসড়কের কাছে মনির হোসেন নামের এক আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি দীপু মনি। হত্যাকাণ্ডের তদন্তে তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।'
রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শেষ হলে দীপু মনির আইনজীবী গাজী ফয়সাল বলেন, 'মাননীয় আদালত, এই হত্যাকাণ্ডে দীপু মনি কোনোভাবে জড়িত নন। তিনি গুরুতর অসুস্থ। আজ তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে এবং ১০ দিন রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।' 
এরপর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা দীপু মনি নিজেই আদালতে কথা বলার অনুমতি চান। তিনি বলেন, 'মাননীয় আদালত, আমি অসুস্থ। আমাকে আজ হাসপাতালে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাকে আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশ আবার আমাকে ১০ দিন রিমান্ডে নিতে চাচ্ছে।' 
দীপু মনি আরও বলেন, 'গত আগস্ট মাস থেকে আমি অসুস্থ। আমার ব্রেন পরীক্ষা করার জন্য একবার কারাগার থেকে তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে সব ধরনের পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি, তাই আমাকে আবার কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। তারপর থেকে আমাকে পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কিন্তু সঠিকভাবে পরীক্ষা হচ্ছে না। আমাকে আর হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না।'
ক্ষোভ প্রকাশ করে দীপু মনি বলেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ, তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা জরুরি। তিনি কারাগারে কেমন আছেন, সে বিষয়েও আদালতে অভিযোগ জানান। তিনি বলেন, 'মাননীয় আদালত, গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে আমি গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আছি। ১৫ দিন পরপরই আমার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাই। কিন্তু আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি না। এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছি, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি মাত্র তিনবার। আমার নামে ৬০টির বেশি মামলা আছে। আমার আয়করসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা খুব জরুরি। মামলার শুনানি শেষ হওয়ার পর আইনজীবীর সঙ্গে ২০ মিনিট কথা বলার অনুমতি চাই।' 
এরপর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতে বলেন, 'মাননীয় আদালত, একজন আসামিকে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। দীপু মনিকেও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না, এটা সত্য নয়। কারণ যখন আসামিকে কাঠগড়ায় আনা হয়, তখন তারা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। শুনানি শেষ হওয়ার পর আলাদা কোনো সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।'
পিপির বক্তব্যের পরে দীপু মনি বলেন, 'মাননীয় আদালত, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুন মারা গেছেন। তাঁকে চারবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, পরে তিনি ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। আমি বলছি, আমি অসুস্থ। আমার ব্রেন পরীক্ষা ও সুচিকিৎসা প্রয়োজন। আমাদের কি মরিয়া প্রমাণ করতে হবে আমরা অসুস্থ?’
![]()  | 
| দীপু মনিকে সোমবার সকালে হাজতখানা থেকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন | 
দীপু মনির বক্তব্য শেষ হওয়ার পর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সোলায়মান সেলিম রাগান্বিত হয়ে উচ্চ স্বরে কথা বলতে শুরু করেন। এ সময় প্রসিকিউশনপক্ষের একজন আইনজীবী বলেন, 'আপনাদের হাতে রক্তের দাগ রয়েছে।' 
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, 'মাননীয় আদালত, দীপু মনির কথার ধরণ দেখলে বোঝা যায়, তিনি যতটা অসুস্থ বলছেন, ততটা নয়।' উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত দীপু মনির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর দীপু মনিকে আবার আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি প্রিজন ভ্যানে তাঁকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন