[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

পূর্বাঞ্চলে ইঞ্জিন সংকট, অতিরিক্ত চাপের কারণে যান্ত্রিক ত্রুটি বাড়ছে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ট্রেন | ফাইল ছবি

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) সংকট দেখা দিয়েছে। যাত্রীবাহী ট্রেনের জন্য যেখানে প্রতিদিন প্রয়োজন ১১৯টি ইঞ্জিন, সেখানে কার্যত মিলছে মাত্র ৭৫টি। ফলে অনেক ইঞ্জিন বিশ্রাম ও রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ না পেয়ে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। একদিকে ট্রেন সময়মতো ছাড়ছে না, অন্যদিকে কিছু ট্রেন এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে।

ইঞ্জিন-সংকটের কারণে গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম-দোহাজারী, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম-কুমিল্লাসহ বেশ কিছু রেলপথে লোকাল ও মেইল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা জানান, একটি ইঞ্জিনের স্বাভাবিক চেক ও রক্ষণাবেক্ষণের সময় এখন আর মানা যাচ্ছে না। এর ফলে ইঞ্জিনগুলোর আয়ুষ্কাল দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পূর্বাঞ্চলে ইঞ্জিন সংকটের কারণে চট্টগ্রাম-সিলেট ও চট্টগ্রাম-জামালপুর রুটের ট্রেন প্রায় সময় বিলম্বিত হচ্ছে। অনেক সময় ট্রেন বাতিলও করতে হয়, এতে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হন।’

খোঁজে জানা গেছে, গত ১ আগস্ট চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কক্সবাজারগামী প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেন বাতিল করা হয়। ট্রেনের টিকিট নেওয়া যাত্রীরা স্টেশনে এসে বিষয়টি জানতে পেরে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা স্টেশন ম্যানেজারের দরজায় লাগানো নেমপ্লেট ও কিছু আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কার্যালয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইঞ্জিন সংকটের কারণে প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেন ওই দিন বাতিল করা হয়। অন্যদিকে, ২৪ আগস্ট ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে রাত সাড়ে ৩টায় পৌঁছার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এসে পৌঁছায়, প্রায় ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট দেরিতে।

এ ট্রেনের প্রায় ১০০ যাত্রী কক্সবাজার যাওয়ার জন্য অন্য ট্রেনে চড়ে যাত্রা করার কথা ছিল। কিন্তু মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন দেরিতে আসায় তারা সৈকত এক্সপ্রেস মিস করেন। চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছার পর তারা স্টেশন মাস্টার ও ম্যানেজারের অফিস এবং রেললাইনে বসে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভকারীরা এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের জন্য সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে রাখেন। পরে যাত্রীদের কক্সবাজারগামী অন্য ট্রেনে তুলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঞা জানান, ‘পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য ১১৯টি ইঞ্জিন দরকার, কিন্তু এখন প্রতিদিন গড়ে ৭৫–৭৬টি ইঞ্জিন পাওয়া যাচ্ছে। মালবাহী ট্রেন থেকে ইঞ্জিন এনে সামাল দেওয়া হচ্ছে। নতুনভাবে মেরামত করার সময়ও নেই, কারণ যাত্রীবাহী ট্রেনে ব্যবহার করতে হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, পূর্বাঞ্চলের যাত্রীবাহী ট্রেনে চলমান ইঞ্জিনের ৫০ শতাংশের বেশি বয়স পেরিয়ে গেছে। অর্থাৎ ২০ বছরের বেশি সময় ব্যবহার হয়ে গেছে। এজন্য ইঞ্জিনে যান্ত্রিক ত্রুটি বেশি দেখা দিচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, কনটেইনার ও তেলবাহী ট্রেনেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন যেখানে ১৩টি ইঞ্জিন দরকার, সেখানে মিলছে মাত্র ৫টি। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে কনটেইনার পরিবহনের জন্য প্রয়োজন ৪টি ইঞ্জিন, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১–২টি। তেল পরিবহনের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা রয়েছে। এছাড়া রেলস্টেশন ও শেডে ট্রেন শান্টিংয়ের জন্য যেখানে ১৩টি ইঞ্জিন দরকার, সেখানে ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ২–৪টি। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে কনটেইনার আনা-নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ট্রেনের ইঞ্জিন পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে ঢাকার আইসিডিতে জট তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে যেমন কনটেইনার পাঠাতে দেরি হচ্ছে, ঢাকার থেকে চট্টগ্রামে আনতেও দেরি হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত চারটি ইঞ্জিন দরকার, কিন্তু আমরা পাচ্ছি মাত্র এক থেকে দুইটি। এ জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান কার্যক্রম পরিচালক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান বলেন, ‘পূর্বাঞ্চলে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনে ইঞ্জিন-সংকট রয়েছে। প্রতিদিন মালবাহী ট্রেনে ১৩টি ইঞ্জিন দরকার, কিন্তু আমরা ৫–৬টির বেশি দিতে পারছি না। যাত্রীবাহী ট্রেনে চাহিদা থাকলেও চালানো সম্ভব হচ্ছে না। শেডে আসা ইঞ্জিন সঙ্গে সঙ্গে অন্য ট্রেনে লাগাতে হচ্ছে, তাই মেরামতও ঠিকভাবে হচ্ছে না। মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন যাত্রীবাহী ট্রেনে ব্যবহার হওয়ায় মালবাহী ট্রেন ঠিকমতো চালানো যাচ্ছে না।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সুবক্তগীন বলেন, ‘পূর্বাঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিন নেই। যেগুলো আছে, সেগুলোও প্রয়োজনমতো বিশ্রাম পাচ্ছে না। একটি ট্রেন শেষ করে আসার পর ইঞ্জিনটি সঙ্গে সঙ্গে অন্য ট্রেনে ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে নতুন ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। আমরা রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এই পরিস্থিতি জানিয়েছি এবং অতিরিক্ত ইঞ্জিন চাওয়া হয়েছে।'  

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন