তোফায়েল আহমেদের শারীরিক অবস্থা ‘অপরিবর্তিত’
প্রকাশঃ
ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনের উজ্জ্বল নক্ষত্র, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আওয়ামী লীগের একসময়কার প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি।
ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউসুফ সিদ্দিক শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বলেন, 'তার অবস্থা ভালো নয়।'
বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা নিয়ে প্রায় ১০ দিন ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শনিবার রাতে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে ইউসুফ সিদ্দিক বলেন, খবরটি সত্য নয়।
হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি মোরশেদুল রাত পৌনে ১১টার দিকে বলেন, 'এক সপ্তাহ ধরে এমন গুজব ছড়াচ্ছে। অনেকেই আমাদের ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন। তিনি সিসিইউতে আছেন। চিকিৎসকরা নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন। অবস্থা খারাপ হলে অবশ্যই জানানো হবে।'
তোফায়েল আহমেদের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল খায়ের বলেন, 'তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।'
পরিবারের একজন সদস্য জানান, কয়েক বছর ধরে তিনি হুইলচেয়ারে চলাফেরা করছেন। স্ট্রোকের পর শরীরের বাঁ পাশ অবশ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না।
১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে জন্ম নেন তিনি। বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকাবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন।
১৯৬৮-৬৯ সালের উত্তাল সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি ছিলেন। সেই সময় তিনি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র আন্দোলনের সামনের কাতারে ছিলেন তিনি।
গণআন্দোলনের চাপে পাকিস্তান সরকার ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। একই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিশাল জনসভা করে। সেখানেই শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়। আর সেই ঘোষণা দেন তোফায়েল আহমেদ।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুজিব বাহিনীর চার আঞ্চলিক প্রধানের একজন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতার পর রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় সক্রিয় থেকেছেন তোফায়েল আহমেদ। নয়বার তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ তিনি ভোলা-১ আসনের এমপি ছিলেন।
দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে পরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। বর্তমানে তিনি দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তাকে রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব দেন, প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে শেখ হাসিনার সরকারে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হন তিনি। আবার ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন