{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

বদরুদ্দীন উমরের চিন্তা টিকিয়ে রাখতে হবে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

শোকসভায় বদরুদ্দীন উমরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন অতিথিরা। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
শোকসভায় বদরুদ্দীন উমরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন অতিথিরা। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

চিন্তা, প্রগতিশীল মতাদর্শ ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার বিকাশের জন্য বদরুদ্দীন উমরের বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরাধিকার টিকিয়ে রাখতে হবে। রাজনৈতিক, সামাজিক ইতিহাসচর্চা ও মানস গঠনে তাঁর লেখনী আরও বহুকাল প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবে।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার ‘কমরেড বদরুদ্দীন উমরের জীবনাবসানে শোকসভা’ অনুষ্ঠিত হয়। এর আয়োজন করেছিল মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী কমিউনিস্ট বিপ্লবী জাতীয় শোকসভা আয়োজক কমিটি। প্রচলিত রীতি অনুসারে কোনো সভাপতি ছিলেন না শোকসভায়। মঞ্চে অতিথিদের কোনো আসনও ছিল না। মঞ্চের এক পাশে রাখা ছিল বদরুদ্দীন উমরের প্রতিকৃতি।

অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল বদরুদ্দীন উমরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। এরপর সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করা হয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক সংগীত ‘জাগো জাগো জাগো সর্বহারা’। আলোচনার পাশাপাশি আরও ছিল নিবেদিত কবিতা পাঠ ও বদরুদ্দীন উমরের জীবন ও কর্ম নিয়ে চিরন্তন দীপশিখা নামে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। দেশের প্রখ্যাত বাম চিন্তক, লেখক ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর ৯৪ বছর বয়সে ৭ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন।

শোকসভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
শোকসভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আলোচনার সূচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বদরুদ্দীন উমর একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন, অনেক ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। সমাজে যেসব মানবিক দুর্বলতার বিষয় থাকে, তাঁকেও সেসব আক্রমণ করেছিল। কিন্তু তাঁকে পথচ্যুত করতে পারেনি। তিনি ভীত হননি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মধ্যে থেকেও সন্ত্রস্ত হননি। সম্মান, পুরস্কারের মোহ তাঁকে স্পর্শ করেনি।

বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই বদরুদ্দীন উমরের অবস্থান থাকবে অনেক উঁচু স্তরে। থাকবেন শ্রদ্ধার জায়গায়। সারা জীবন তিনি যে আদর্শের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন, সেখানে কখনো আপস করেননি।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বদরুদ্দীন উমরের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ইতিহাসের অনুসন্ধান, সাম্রাজ্যবাদের ভূমিকা, বিপ্লবী আন্দোলনের পরিস্থিতি, রাজনীতিতে সংস্কৃতির ভূমিকা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার বিষয়গুলো বুঝতে চাই, তবে অবশ্যই বদরুদ্দীন উমরের কাছে আসতে হবে। অনিবার্যভাবে তাঁর রচনা পাঠ করতে হবে।’
বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বদরুদ্দীন উমরের প্রয়াণে অন্ধকার ঘরে একটি প্রজ্বলিত আলো নির্বাপিত হয়েছে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমাদের দেশে যে ধারার রাজনীতি প্রচলিত, সেখানে জ্ঞানের চর্চা হয় না। জ্ঞানচর্চাবিহীন রাজনীতিতে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল বাতিঘর।’

ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের নেত্রী দীপা দত্ত বদরুদ্দীন উমরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি ছিলেন সময়ের সাহসী প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তিনি ছিলেন খুব স্নেহময়।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বদরুদ্দীন উমর তাঁর রচনা ও সাংগঠনিক কাজের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন প্রজন্মের মানুষকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছেন। তাঁর চিন্তা ও কাজ আরও বহুকাল প্রাসঙ্গিক থাকবে।

শোকসভায় স্মৃতিচারণ করেন বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
শোকসভায় স্মৃতিচারণ করেন বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
 
পরিবারের পক্ষে বদরুদ্দীন উমরের মেয়ে সারা আক্তার বানু শোকসভা আয়োজনের জন্য আয়োজক, বক্তা ও শ্রোতাদের ধন্যবাদ জানান। বাবার স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, তিনি (বদরুদ্দীন উমর) শৈশব থেকেই সন্তানদের ভালো মানুষ হতে শিখিয়েছেন। ভালো ভালো বই এনে তাঁদের পড়তে দিতেন।

অনুষ্ঠানে প্রায় ২২ জন বক্তা বক্তব্য দেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক সাইফুল হক, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, বাংলাদেশ জাসদের নেতা আক্তার হোসেন, কৃষক ও মজদুর সংগঠনের সভাপতি সজীব রায়, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের নেতা মুজিবুর রহমান, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান, গণ অধিকার পরিষদের সম্পাদক রাশেদ খান, প্রকাশনা সংস্থা বাঙ্গালা গবেষণার প্রকাশক আফজালুল বাশার, বাসদ মার্ক্সবাদীর নেতা মাসুদ রানা, বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সভাপতি কাজী ইকবাল প্রমুখ।

শোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের লেখক অর্ক ভাদুড়ি, ডায়মন্ড হারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিন্দিতা ঘোষ এবং অনিক পত্রিকা সম্পাদকমণ্ডলীর পাঠানো পৃথক শোকবার্তা পড়ে শোনানো হয়। এতে নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন কবি হাসান ফখরী এবং সঞ্চালনা করেন শোকসভা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ফয়জুল হাকিম।
শোকসভায় বক্তারা

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন