[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

রাকসু ভোটে তরুণ প্রার্থীদের ভিন্ন স্বর—গান-গম্ভীরা আর চিঠির কৌশল

প্রকাশঃ
অ+ অ-
শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে গান গেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন এক প্রার্থী। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে প্রচার ও প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রথম দিন থেকেই প্রচারে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি। প্রার্থীদের মাথায় রাখতে হচ্ছে বেঁধে দেওয়া সময়। এতে সব শিক্ষার্থীর কাছে নাম ও ব্যালট নম্বর পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে প্রার্থীদের।

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রচার ও প্রচারণা আরও উৎসবমুখর হয়ে উঠছে। শিক্ষার্থীদের নজর কাড়তে অনেক প্রার্থীই বেছে নিয়েছেন প্রচারণার নানা কৌশল। কেউ গাচ্ছেন গান, কেউবা টাকা বা ডলারের আদলে প্রচারপত্র বানিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে সরাসরি প্রচারের চেয়ে ফেসবুক পেজ বা গ্রুপে বেশি সরব প্রার্থীরা।

প্রচারণার চতুর্থ দিন আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট থেকে ভেসে আসছিল গান। গিয়ে দেখা গেল, একদল শিক্ষার্থী নেচে নেচে গান গাচ্ছেন। জানা গেল, গানের এ আয়োজন কেন্দ্রীয় সংসদে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী কাজী শফিউল কালামকে (কে এস কে হৃদয়) ঘিরে।

গান গাইতে গাইতে শফিউল কালাম বলেন, ‘আমি গানের মানুষ। রাকসু নির্বাচনে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। অনেক আগে থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত আছি।’ এই বলেই আবার গান ধরলেন।

ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রার্থী জাহিদ হাসানকে লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পরে দেখা গেল একই জায়গায়। মাথায় কৃষকদের মাথাল আর কাঁধে গামছা। গম্ভীরা গানের সুরে তিনি ভোট প্রার্থনা করছিলেন।

অল্প সময়ের ব্যবধানে একই জায়গায় দেখা গেল স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী মো. আ. নূরকে। তিনি কর্কশিট কেটে নির্বাচনে তাঁর ব্যালট নম্বর লিখে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বলেন, দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কর্কশিট কেটে বড় করে ব্যালট নম্বর করেছেন। প্রচারণার শেষের দুই দিন আরও নতুন কিছু নিয়ে আসবেন।

নানা আদলে প্রচারপত্র
মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি পদপ্রার্থী মীর কাদির একটু ভিন্ন আদলে প্রচারপত্র তৈরি করে বিলি করছেন। পুরোনো দিনের টেলিভিশনের ফ্রেমের ভেতরে তাঁর ছবি, পদের নাম ও ব্যালট নম্বর দেওয়া আছে। এক পাশে লিখে দিয়েছেন, ‘আমার ইশতেহার সম্পর্কে জানতে হলে স্ক্যান করুন।’ মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদের আরেক প্রার্থী ফাহির আমির তাঁর অঙ্গীকারনামা লিখে খামে ভরে চিঠি আকারে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছেন।

কর্কশিটে ব্যালট নাম্বার লেখে প্রচার চালাচ্ছেন এক ভিপি প্রার্থী। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী রিয়াদ খান দুই টাকার নোটের আদলে প্রচারপত্র বানিয়ে বিলি করছেন। তিনি বলেন, তাঁর ব্যালট নম্বর ২। এ কারণে দুই টাকা বেছে নিয়েছেন। প্রচারপত্র আকর্ষণীয় হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এটি গ্রহণ করছেন।

ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস (এষা) হাত আকৃতির প্রচারপত্র তৈরি করেছেন। এটি দিয়ে হাতের পাঁচ দেখাচ্ছেন। কারণ, তাঁর ব্যালট নম্বর ৫। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মো. আতাউল্লাহ গাছ আকৃতির প্রচারপত্র বিলি করছেন। কারণ, তিনি পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ফেসবুকে সরব বেশি
ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ পদে মো. আর–রাফি খান ফেসবুকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ভিডিও ছেড়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা নিয়ে কৌতুকি ঢঙে এসব তথ্য তুলে ধরে শেষে বলেছেন, ‘আজ যাচ্ছি। তবে আপনাদের সেবা করা ছাড়ছি না। সমস্যাগুলোর সমাধান চান? সমাধান একটাই।... ২৫ তারিখ সারা দিন, ১০ নম্বর ব্যালটে ভোট দিন।’

সরাসরি প্রচারের চেয়ে এভাবে ফেসবুক পেজ ও গ্রুপগুলোয় বেশি সক্রিয় থাকছেন প্রার্থীরা। এতে প্রার্থীরা প্রচারপত্র, পোস্টার ও ইশতেহার এবং বিভিন্ন প্রমোশনাল ভিডিও পোস্ট করছেন। প্রায় প্রতিটি প্যানেলই প্যানেলের নামে ফেসবুক পেজ খুলে বুস্ট করছে। সঙ্গে অনেকেই নিয়োগ দিয়েছে ‘পিআর টিম’ও। তাঁরা প্রার্থীদের নিয়ে নানা রকম প্রমোশনাল প্রচারণা চালাচ্ছেন।

ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ফেসবুক পেজে অনুসারী ৬৬ হাজার। প্যানেলটি ফেসবুকে বেশি সরব। এই প্যানেলের প্রার্থীরা যে যে পদে লড়বেন, সেই পদ–সংশ্লিষ্ট নানা আঙ্গিকে ভিডিও করে প্রচার চালাচ্ছেন। প্যানেলের হয়ে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জাহিদ হাসান পুলিশ সেজে অভিনেতা মোশাররফ করিমের ভঙ্গিতে বলেন, ‘বুঝলা মলয়, জীবনে দুইটা কথা মনে রাখবা, এক, পদের নাম সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক; দুই, ব্যালট নম্বর কিন্তু ৫’। ভিডিওটি আজ বিকেল পর্যন্ত আড়াই লাখ দর্শক দেখেছেন।

শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর কাছে ভোট চাচ্ছেন এক প্রার্থী। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার সরাসরি প্রচারের পাশাপাশি ফেসবুকেও ভিডিও ছাড়ছেন। এক ভিডিওতে আম্মারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের সামনে যেতে দেখা যায়। ভিডিওর শেষ দিকে তিনি জানান দিচ্ছেন, জিএস পদে তাঁর ব্যালট নম্বর কত। এই প্যানেলের নামে একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। সেখানে নানা রকম দেশাত্মবোধক গানের ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে প্রচারণার ভিডিও পোস্ট করা হচ্ছে।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, ভোট গ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগপর্যন্ত সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা করা যাবে। অর্থাৎ প্রার্থীরা ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন। প্রচারণার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। আচরণবিধিতে নির্বাচনী সভা, সমাবেশ ও শোভাযাত্রার বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রার্থী ও ভোটার ছাড়া অন্য কেউ কোনোভাবেই কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচারণা চালাতে পারবেন না। নির্বাচনী প্রচারণায় শুধু সাদা–কালো পোস্টার ব্যবহার করা যাবে। নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ভবনের দেয়ালে নির্বাচনসংক্রান্ত লেখা ও পোস্টার লাগানো যাবে না।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন