কোট-স্যুট পরে আর পারলার থেকে এসে খাল পরিষ্কার হবে না: মির্জা ফখরুল
![]()  | 
| খাল পরিষ্কারে বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এই কর্মসূচিতে নেতা–নেত্রীদের সুসজ্জিত চেহারায় দেখে অসন্তোষ জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন | 
‘নেতারা তো আজকে কোট-স্যুট পরে আসছেন। সবাই স্যুট-বুট পরে আসছেন। এভাবে কি খাল পরিষ্কার করা যাবে? যাবে না। গামবুট পরেন বা হাফপ্যান্ট পরেন, সবাই উৎসাহ নিয়ে নামেন,’ খাল পরিষ্কার কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাওয়া দলের নেতাদের উদ্দেশে এই কথাগুলো বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় উপস্থিত নারীনেত্রীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নারীনেত্রীরা কেউ কেউ পারলার থেকেও আসছেন। এভাবে হবে না। জনগণের কাছে যেতে হবে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপির কথা বলতে হবে। শুধু স্লোগান দিলে বা তালি বাজালে রাজনীতি হয় না। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নদী-খাল পুনঃখনন করেছিলেন, আমাদেরও কাজ করতে হবে।’
বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বরাবর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে আসছে দলটি। এবার সেখানে খাল পরিষ্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় ১৫ নম্বর সেক্টরে খাল পরিষ্কারের কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। সেই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এবার খাল পরিষ্কার কর্মসূচি নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের দিনে শোভাযাত্রা করলে রাস্তায় ভিড় হতো, মানুষের কষ্ট হতো। তাই তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা খাল পরিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাঁচ মিনিটের জন্য খালে নামলে হবে না, আমরা দেখতে চাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আসলেই হয়েছে।’
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি গঠন করেন। বিএনপি গঠনের পর দেশে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘তখন সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়েছিল, পত্র–পত্রিকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, মানুষের ন্যূনতম অধিকার শেখ মুজিব কেড়ে নিয়েছিলেন। সেই সময় শহীদ জিয়া মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আজকেও আমাদের নেতা–কর্মীদের মাঠে নেমে তা প্রমাণ করতে হবে।’
![]()  | 
| বিএনপির খাল পরিষ্কার কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন | 
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যদি আমরা আওয়ামী লীগের মতো চাটার দলে পরিণত হই, মানুষ আমাদের ভালোবাসবে না। ইনশা আল্লাহ বললে হবে না, কাজে দেখাতে হবে। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ছয় বছর জেল খেটেছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন। আপনাদের অনেককেই মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হয়েছে, কেউ গুম হয়েছেন, কেউ পাড়া বদল করে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ আমরা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হয়েছি।’
ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হাসিনা দেশ থেকে পালিয়েছে ঠিকই, কিন্তু শয়তানি ছাড়েনি। ভারতে গিয়ে আওয়ামী লীগ আর ছাত্রলীগকে উসকে দিচ্ছে গোলমাল করার জন্য। এভাবেই নুরকে মারা হয়েছে, লুৎফরকেও হামলার শিকার হতে হয়েছে।’
নেতা–কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনাদের ওপর হাত পড়লে আওয়ামী লীগের সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। ১৯৭১ সালে আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনো আপস করা হবে না।’
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা সব রাজনৈতিক দল মিলে ইউনূস সাহেবকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি নির্বাচনমুখী একটি সরকার পরিচালনার চেষ্টা করছেন। আমাদের দেওয়া ৩১ দফা সংস্কারের মধ্যেই তাঁর দিকনির্দেশনা রয়েছে।’
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আগে সাংবাদিকেরা লিখতে পারত না, দেখাতে পারত না, এখন পারে। আমাদের সরকার এলে আরও বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে; কারণ, সূচনা করেছিলাম আমরাই।’
গুজব সম্পর্কে নেতা–কর্মীদের সতর্ক করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিভেদ সৃষ্টির জন্য ভারত থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নাই, আছে ঐক্য। এই ঐক্য নিয়েই আমরা জয়লাভ করব ইনশা আল্লাহ।’
খাল পরিষ্কার কর্মসূচির জন্য উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সেতুর উত্তর পাশে খালে সিমেন্টের বস্তায় বালু-মাটি ভরে ঘাটলা তৈরি করা হয়। মির্জা ফখরুলসহ অন্য নেতা-কর্মীরা বক্তব্য শেষে ওই ঘাটলায় যান। নেতারা ঘাটলায় দাঁড়িয়ে পাড়ে জমে থাকা কচুরিপানা ও অন্য আবর্জনা টেনে পাড়ে তোলেন। একপর্যায়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক ও সদস্যসচিব মোস্তফা জামানসহ কিছু নেতা–কর্মী ঘাটলা থেকে নিচে খালে নামেন। তাঁদের হাত দিয়ে খালের আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখা যায়। এদিকে খাল থেকে পরিষ্কার করা বর্জ্য রাস্তার একপাশে তুলে রাখেন কিছু নেতা-কর্মী। বিএনপির নেতা-কর্মীদের তোলা বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় এক ভ্যান হবে।
সমাবেশ শেষে বিকেল ৫টার দিকে বিএনপির মহাসচিব খালপাড় পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করতে যান। প্রায় ১০ মিনিট পর তিনি সেখান থেকে উঠে আসেন। পরে আরও প্রায় ৭ মিনিটের মতো ছিলেন মহানগর উত্তরের অন্য নেতা-কর্মীরা। বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটের দিকে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ঘাট থেকে উঠে আসেন। তখন করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ডেকে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা খালের চারদিকে যে আবর্জনা আছে, সেগুলো পরিষ্কার করবেন।’
বিএনপির এই কর্মসূচিতে খাল পরিষ্কার করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটির প্রায় ৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ঢাকা উত্তর সিটির ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়োজিত আছেন বলে প্রথম আলোকে জানান সুপারভাইজার ইব্রাহিম খলিল। ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরও বেশির ভাগ সময় বসে থাকতে দেখা যায়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল খালপাড়ে যাওয়ার পর কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী খাল পরিষ্কারের কাজে যোগ দিয়েছিলেন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন