পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
![]() |
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার দুপুরে কেন্দ্রীয় মসজিদ সড়কে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এসে তাঁরা সমাবেশ করেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্য কোটা একটা মীমাংসিত ইস্যু। এটি অন্যায্য ও অযৌক্তিক একটি কোটা। এটিকে নামে-বেনামে ফিরিয়ে আনা চলবে না। তাঁরা প্রয়োজনে রক্ত দেবেন, তবু ক্যাম্পাসে পোষ্য কোটা ফিরতে দেবেন না। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ক্যাম্পাসে যখন রাকসু নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে, সেই সময়ে এসে নির্বাচন বানচাল করার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র কখনো বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে নিযুক্ত সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এই সিদ্ধান্তের আগাম খবর জানতে পেরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলে।
আজকের সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘রাকসুকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে পোষ্য কোটাকে নামে-বেনামে নিয়ে আসা হলো। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি, রাকসুও হবে, পোষ্য কোটাও কবর থেকে উঠবে না।’
আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাকসু নির্বাচন চায় না। যেহেতু তারা চায় না, তাই রাকসু নির্বাচন বানচাল করার জন্য নির্বাচনের অল্প কিছুদিন আগে এই পোষ্য কোটার ইস্যুকে জ্বলন্ত করে নিয়ে এসেছে।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহির ফয়সাল বলেন, ‘আপনারা যদি রক্ত চান, আমরা রক্ত দিতে রাজি আছি। এই রক্ত দিয়ে গোসল করবেন? নাকি পিপাসা মেটাবেন? আমাদের অনেক রক্ত আছে। আমরা রক্ত দেব, কিন্তু ক্যাম্পাসে পোষ্য কোটা ফিরতে দেব না।’
জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘোষিত ২১ সেপ্টেম্বরের শাটডাউন কর্মসূচি রাকসু নির্বাচনে প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। এ জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের ভর্তি উপকমিটি এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যা চায়, সেটাই হবে। কারণ তাঁরা শান্তিপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় চান।
গত ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা বাতিল ঘোষণা করেন উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পোষ্য কোটা থাকবে না বলে তিনি জানিয়েছিলেন।
এরপর পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রশাসনের আশ্বাসে তাঁরা কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন। সর্বশেষ গত বুধবার পোষ্য কোটা পুনর্বহালসহ তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। দাবি না মানলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন