{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

সংসদে নারী, সংখ্যালঘু ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। রোববার নওগাঁ শহরের একটি হোটেল মিলনায়তনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

দেশকে দ্রুত গণতান্ত্রিক ধারায় আনতে হবে। মানুষের প্রত্যাশা, আগামী সংসদ নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও ভোটারদের অংশগ্রহণে মুখর। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে পেশিশক্তি ও কালোটাকার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। জাতীয় সংসদে নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। নওগাঁসহ সমতলের আদিবাসীদের জন্য জাতীয় সংসদে আলাদা আসন রাখা যেতে পারে।

‘জেলা পর্যায়ের সংলাপ: অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা উঠে আসে। আজ রোববার সকালে নওগাঁ শহরের বইপট্টি এলাকায় একটি রেস্তোরাঁ ও কমিউনিটি সেন্টারের মিলনায়তনে এই গোলটেবিল বৈঠক হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের সুশীল প্রকল্পের অধীন বরেন্দ্র উন্নয়ন সংস্থা (বিডিও) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

গোলটেবিল বৈঠকে নওগাঁ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান (রিপন) বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রথম ধাপ হচ্ছে নির্বাচন। ছোট-বড় সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন মানুষের প্রত্যাশা। আগামীতে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেটি যেন উৎসবমুখর পরিবেশে এবং সুষ্ঠু হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এমন একটি নির্বাচনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে প্রশাসন স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে, ভোটকেন্দ্রে কোনো সহিংস ঘটনা ঘটবে না এবং ভোটারদের কোনো প্রকার ভয়ভীতি দেখানো হবে না।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী প্রার্থীর বিষয়ে মামুনুর রহমান বলেন, ‘অনেকে বলছেন, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন নয়, সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি মনে করি, আলোচনা সাপেক্ষে বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। নারীদের জন্য সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হলে সেটি বাস্তবায়ন করা যেতেই পারে।’

সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন জামায়াতে ইসলামীর নওগাঁ জেলা শাখার সেক্রেটারি আ স ম আবু সায়েম। তিনি বলেন, দেশে একটা প্রবণতা হলো, যে দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, প্রশাসন ও গণমাধ্যম সেদিকে হেলে যায়। যারা ক্ষমতায় আসতে পারে, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করে এবং গণমাধ্যমও তাদেরকেই ফোকাস করে বেশি। এটি হওয়া ঠিক নয়। পাশাপাশি নির্বাচনে যাতে কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধ হয়, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির পক্ষে দলীয় অবস্থান তুলে ধরে আবু সায়েম বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত হবে। অনেক ধরনের পিআর পদ্ধতির চর্চা হয়ে থাকে। দেশের জন্য যেই পদ্ধতি ভালো, সেটিকেই গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু বিষয়টি আলোচনাতেই আনা হচ্ছে না। পিআর পদ্ধতির বিষয়টি আলোচনায় এনে এই পদ্ধতির যেগুলো নেগেটিভ দিক আছে, সেগুলো বাদ দিয়ে ভালো দিকগুলো নিয়ে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের জন্য সংসদে আলাদা আসনের প্রস্তাব দেন জামায়াত নেতা আবু সায়েম। তিনি বলেন, ‘সংসদে দেশের সব জনগোষ্ঠীর মানুষের কণ্ঠ যাতে থাকে সেটি নিশ্চিত করতে সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের জন্য আলাদা আসন করতে হবে। আমরা সমাজের সব পক্ষের মানুষের কথা শুনতে চাই।’

জাতীয় সংসদে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির নওগাঁ জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য দেওয়ান মাহবুব আল হাসান বলেন, ‘আমি চাই নারীরা সরাসরি নির্বাচন করে আসুক। কারণ, আমি মনে করি, সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন করা মানে নারীকে ছোট করা বা হেয় করা।’

পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার সভাপতি আশরাফুল ইসলাম। এ বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে সব শ্রেণি–পেশা, মতাদর্শের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেটা বর্তমান পদ্ধতিতে সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে দ্রুত গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা উচিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন সেই সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত একটি নির্বাচন দেওয়া।

প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সুশীল প্রকল্পের কর্মকর্তা মৌসুমী বিশ্বাস। জেলা সংলাপে আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বিডিওর নির্বাহী প্রধান আখতার হোসেন, গণফোরামের নওগাঁ জেলা কমিটির সভাপতি বিন আলী পিন্টু, নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক কায়েস উদ্দীন ও নবির উদ্দিন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতা নকুল পাহান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের নওগাঁর সহসাধারণ সম্পাদক নাইস পারভীন প্রমুখ।

আলোচনা পর্বের সূচনায় ‘অন্তর্ভুক্তি ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংলাপে নাগরিক প্রত্যাশা ও সুপারিশপত্র তুলে ধরেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ফজলুল হক খান।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন