[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

নির্বাচন সামনে রেখে ইসির কর্মপরিকল্পনা, নভেম্বর পর্যন্ত প্রস্তুতির সময়সীমা

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৩০ নভেম্বর, আইন–বিধি সংস্কার ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে।
প্রকাশঃ
অ+ অ-

নির্বাচন কমিশন

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে সাংবিধানিক এই সংস্থা।

নির্বাচন সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতিমূলক কাজগুলোর কোনটি কবে নাগাদ শেষ করা হবে, তার একটি সম্ভাব্য সময়সীমা উল্লেখ রয়েছে কর্মপরিকল্পনায়। এতে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, নির্বাচনী আইন-বিধি সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণসহ ২৪টি কাজের কথা বলা হয়েছে।

ইসির নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। তবে জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত না করে নির্বাচনের দিকে যাওয়াটা সরকারের আগের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল বলে মনে করে এনসিপি। জামায়াতে ইসলামী এই রোডম্যাপকে গতানুগতিক এবং কিছুটা বিভ্রান্তিমূলক মনে করে।

আগামী রমজানের আগে (২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে, এটি আগেই অন্তর্বর্তী সরকার ও ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। সে লক্ষ্য সামনে রেখেই ইসি আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করল। তবে নির্বাচনের তফসিল কবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য কর্মপরিকল্পনায় নেই।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন। নির্বাচনের তফসিল এবং ভোট কবে হবে—এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি ইসি সচিব। তিনি বলেন, ভোট গ্রহণের ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর ইসিকে আগামী রমজানের আগে ভোট আয়োজন করার জন্য বলেছে। ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি রমজান মাস শুরু হবে।

  • নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি।
  • জামায়াত মনে করে এ কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা অপরিপক্ষ ও আংশিক।
  • এনসিপি বলছে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচনের দিকে যাওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল।

গণপরিষদ ও গণভোটের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা জাতীয় নির্বাচনের জন্য। সংসদ নির্বাচনের বাইরে কথা বলার এখতিয়ার তাঁর নেই।

ইসির কর্মপরিকল্পনায় যে ২৪টি কাজের উল্লেখ আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অংশীজনের সংলাপ; ভোটার তালিকা প্রণয়ন; নির্বাচনী আইন-বিধি সংস্কার; নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন; নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা হালনাগাদ; ভোটকেন্দ্র স্থাপন; আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম; পোস্টাল ভোটিং ও অন্যান্য কার্যক্রম।

কোনটি কবে
ইসির কর্মপরিকল্পনায় আইন-বিধি সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের কাজ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা উল্লেখ আছে। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের খসড়া ইতিমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সীমানার চূড়ান্ত গেজেট এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জিআইএস ম্যাপ প্রকাশ করার পরিকল্পনা আছে।

আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে। আইন অনুযায়ী, চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করা হবে ভোট গ্রহণের তারিখের অন্যূন ২৫ দিন আগে।

ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ ইতিমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে। বাদ পড়া ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা এর আগে যাঁদের জন্ম, এমন বাদ পড়া ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করে ৩০ আগস্ট ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর যাঁদের জন্ম ২০০৭ সালের ৩১ অক্টোবর বা এর আগে, তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ৩০ নভেম্বর।

অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ
নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে ইসির সংলাপ শুরু হবে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে, চলবে এক থেকে দেড় মাস। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীল সমাজ, নারী সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের সম্পাদক, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞ এবং জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে এই সংলাপ হবে। তবে সংলাপের আলোচ্যসূচি কী হবে, তা বলা হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পর যদি কোনো কিছু সংযোজনের প্রয়োজন হয়, ইসি সেভাবে ব্যবস্থা নেবে। তবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার পর আর বড় ধরনের সংযোজনের প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন না তিনি।

পোস্টাল ভোটিং
আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চায় ইসি। এ জন্য আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ-সংক্রান্ত মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হবে। এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে অক্টোবরে। প্রবাসী ভোটারদের তালিকাভুক্তি ও নিবন্ধন শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ১১ নভেম্বর, চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রবাসী ভোটারদের কাছে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে ২০ নভেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি।

ইসি আগেই জানিয়েছিল, এই ব্যালটে প্রার্থীদের নাম থাকবে না। শুধু নিবন্ধিত দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক থাকবে। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রবাসী ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। ভোটের তারিখের এক সপ্তাহ আগে প্রবাসী ভোটারদের ভোট ও ব্যালট পেপার ফেরত আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে ইসি কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, প্রতিটি জিনিসই চ্যালেঞ্জের। প্রতিটি জিনিস মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয় মানসিক দৃঢ়তা ইসির আছে।

নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে আখতার আহমেদ বলেন, এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। ইসির কাজ নির্বাচন-সম্পর্কিত কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ইসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবে।

রাজনৈতিক দলের প্রচার
কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর বাংলাদেশ বেতার এবং বিটিভিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারণা এবং দলীয় প্রধানের বক্তব্য দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠাবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের সম্প্রচার বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রচার করতে পারবে।

প্রতীক বরাদ্দের পরপর রিটার্নিং কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে একই প্ল্যাটফর্মে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে ভোটার ও অংশীজনদের উপস্থিতিতে নির্বাচনী ইশতেহার পাঠের ব্যবস্থা করা হবে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আশ্বস্তবোধ করছি যে নির্বাচন কমিশন আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে।’

এই বিষয়ে গত রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, এই রোডম্যাপ গতানুগতিক এবং কিছুটা বিভ্রান্তিমূলক। কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। এমনকি জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান এবং এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত হয়নি। এ অবস্থায় এই রোডম্যাপ ঘোষণা অপরিপক্ব ও আংশিক। এতে জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারের পর্যাপ্ত অগ্রগতি সাপেক্ষে নির্বাচনের দিকে এগোনোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এর আগেই ইসিকে নির্বাচনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই দুটি নির্দেশনায় সরকারের পরস্পর বিপরীত মত পরিলক্ষিত হচ্ছে। জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত না করে নির্বাচনের দিকে যাওয়াটা সরকারের আগের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, পুরোনো বন্দোবস্তে নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনার আগে দেশবাসী সংস্কার ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রোডম্যাপ চায়।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন এ মুহূর্তে আমাদের প্রধান জাতীয় স্বার্থ। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন রোডম্যাপেরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। আমরা এই রোডম্যাপ ঘোষণাকে স্বাগত জানাই।’

রোডম্যাপ ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে এবি পার্টিও। তবে দলটি মনে করে, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপারে আস্থাশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা কঠিন হতে পারে।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন