[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

লতিফ সিদ্দিকী বললেন, আদালতের প্রতি আস্থা নেই

প্রকাশঃ
অ+ অ-

শুক্রবার সকালের দিকে লতিফ সিদ্দিকীকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নেওয়া হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রিজন ভ্যানে আনা হয় আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন ও সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্নাকে। ভ্যানটি হাজতখানার দিকে যায়।

দেড় ঘণ্টা পর তাঁরা হাজতখানা থেকে বের হন। লতিফ সিদ্দিকীর মাথায় পুলিশের হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। তাঁর দুই হাত পেছনে ছিল। তবে হাতকড়া পরানো ছিল না। লতিফ সিদ্দিকীর পেছনে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান। তাঁর বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় পুলিশের হেলমেট। ডান হাতে হাতকড়া, বাঁ হাতে বাংলাদেশ সংবিধান। এ সময় হাফিজুর রহমান সংবিধান বাঁ হাত ধরে উঁচু করে ধরে রাখেন। পরে তাঁদের নেওয়া হয় আসামির কাঠগড়ায়।

একজন আইনজীবী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কাছে এগিয়ে যান। তিনি ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতে চান। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আইনজীবীকে বলেন, আদালতের প্রতি তাঁর কোনো আস্থা নেই। এ জন্য তিনি কোনো আইনজীবী নিয়োগ দেবেন না। তখন সেই আইনজীবী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কাছে জানতে চান, তিনি নিজে আদালতে কোনো কথা বলতে চান কি না? তখনো আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সেই আইনজীবীকে জানিয়ে দেন, তিনি আদালতের কাছেও কোনো বক্তব্য দেবেন না।

সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে এজলাসে আসেন সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক। তখন সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌফিক হাসান লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। তৌফিক হাসান বলেন, ‘মাননীয় আদালত, গতকাল বেলা ১১টার সময় দায়িত্ব পালনকালে জানতে পারি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কিছু লোককে ঘেরাও করে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বলে স্লোগান দিচ্ছে। তখন দেখতে পাই, একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধের জন্য মঞ্চ ৭১ নামের একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে।’

পুলিশ কর্মকর্তা তৌফিক হাসান বলেন, ‘মাননীয় আদালত, উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী “মঞ্চ-৭১”–কে পুঁজি করে প্রকৃতপক্ষে দেশকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অস্থিতিশীল করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করেছেন।’

এ পর্যায়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শামসুদ্দোহা সুমন। তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, মঞ্চ-৭১ নামের সংগঠনটির জন্ম হয়েছে ৫ আগস্ট। যেদিন ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। আসামি আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ অন্য আসামিরা সবাই ফ্যাসিস্ট হাসিনার সুবিধাভোগী। বিগত ১৭টি বছরে পরে তাঁরা কোনো না কোনোভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন।’

পিপি শামসুদ্দোহা বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা। এ জন্য তাঁরা বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’

আবদুল লতিফ সিদ্দিকীদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন জানিয়ে পিপি শামসুদ্দোহা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের আরেকটি মামলায় একজন মেজরের স্ত্রীসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবদুল লতিফ সিদ্দিকীরাও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত। আমরা খুব শিগগির তাঁদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করব। কারা এই আসামিদের সহযোগী, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আর কারা জড়িত, সেটি জানার জন্য এই আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

আদালতে লতিফ সিদ্দিকী কোনো কথা বলেননি। আদালত প্রায় ৪৫ মিনিট উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ অন্যদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক। 

কী ঘটেছিল

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমানসহ অন্যরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে যান। ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন শেখ হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে জামায়াত-শিবির ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জুতার মালা পরাচ্ছে।’

শেখ হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। একপর্যায়ে তাঁরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের (ডিএমপি) একটি দল এলে তাঁরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মনজুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন। গতকাল দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন