জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রদের সরানোর অভিযান, হল কক্ষে উত্তেজনা
প্রতিনিধি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
![]() |
মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অনেকে আরও কিছু দিন হলে থাকতে চান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আসন্ন জাকসু নির্বাচন সামনে রেখে আবাসিক হল থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সরাতে অভিযান চালিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু অভিযানের সময় কিছু শিক্ষার্থী হল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।
শনিবার রাত আটটার দিকে আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে অভিযান শুরু করে প্রশাসন। কয়েকটি বন্ধ কক্ষ সিলগালা করা হয় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আজ রোববারের মধ্যে হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযান পরিচালনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব, সহ-উপাচার্য সোহেল আহমেদ ও মাহফুজুর রহমানসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযান শেষে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ফিরে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের গাড়িতে কয়েকজন মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী আঘাত করে। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অভিযান পরিচালনার একপর্যায়ে হলের একদল মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী হল ছাড়বেন না জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর অভিযান পরিচালনায় অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা হলের প্রাধ্যক্ষ কক্ষে আলোচনায় বসেন। আলোচনার একপর্যায়ে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব নিজের গাড়িতে করে চলে যাচ্ছিলেন। তখন মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কয়েকজন তাঁর গাড়িতে হাত দিয়ে আঘাত (থাপ্পড়) করেন।
এই পরিস্থিতিতে অধ্যাপক আব্দুর রব গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে প্রক্টর আসেন এবং ‘এটা কোন ধরনের আচরণ’ তা জানতে চান। তখন শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন বলেন, কোষাধ্যক্ষ স্যার গাড়িতে করে ফিরছিলেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী তার গাড়িতে আঘাত করেন। ট্রেজারার স্যার গাড়ি থেকে বের হলে শিক্ষার্থীরা চিৎকার করেন। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভকারী মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই তারা গণরুমে ছিলেন দুই থেকে তিন বছর। ওই সময়টা তাদের জীবন থেকে নষ্ট হয়েছে। তাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে। এখন চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁরা এখনই হল ছাড়বেন না। তাঁদের আরেকটু সময় প্রয়োজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিক্ষোভকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, হলে বর্তমানে কোনো সিট সংকট নেই। নতুন শিক্ষার্থীরা আসার আগেই আমরা হল ছেড়ে দেব, তা আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের কক্ষে অভিযান চালিয়েছে। কয়েকটি কক্ষ সিলগালা করেছে। চাইলেই তো আর হল থেকে যখন-তখন বের হওয়া যায় না।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, জাকসু নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। হলে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। তাই অভিযান পরিচালনা করেছি। একে একে সব হলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। শনিবার আমাদের হলে অভিযান পরিচালনার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে এবং ট্রেজারার স্যারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা উপাচার্যের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন