{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

সাশ্রয়ী দামের পণ্যের খোঁজে মধ্যবিত্তও টিসিবির লাইনে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ | ফাইল ছবি

দুই মাসের বিরতির পর পুনরায় ট্রাকে করে তেল, চিনি ও ডাল বিক্রি শুরু করেছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। গত ১০ আগস্ট থেকে এই কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেতে মানুষের ভিড় বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার শুধুমাত্র নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্তরাও লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন। ঢাকা জেলার বিভিন্ন স্থানে এ দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে।

জানা গেছে, এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো সীমিত আয়ের মানুষদের সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং সম্প্রতি রমজান ও কোরবানির ঈদের পর মূল্যবৃদ্ধি বিবেচনা করে এ উদ্যোগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। 

তবে রাজধানীর আশপাশের কিছু এলাকায় দেখা গেছে, অনেক ক্রেতা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য নিতে পারছেন না। পূর্ব ঘোষিত স্থানে ট্রাক দেরিতে পৌঁছানোর কারণে হুড়োহুড়ি দেখা দিচ্ছে, যা বিশেষ করে বৃদ্ধ ও অসুস্থদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। অনেকেই সকাল থেকেই রাস্তার ধারে অপেক্ষা করছেন, কিন্তু ট্রাক কখন আসবে তা জানা নেই।

টিসিবির উপপরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় ট্রাকের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২৫টি, গাজীপুরে ৬টি, কুমিল্লায় ৩টি, ঢাকা জেলায় ৮টি, কুমিল্লা জেলায় ১২টি, ফরিদপুরে ৪টি এবং পটুয়াখালী ও বাগেরহাটে ৫টি ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন একটি ট্রাক থেকে ৫০০ জন ক্রেতাকে তেল, চিনি ও মসুর ডাল সরবরাহ করা হবে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ এবং স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের সীমিত কার্যকারিতা কারণে টিসিবির কার্যক্রম দীর্ঘদিন স্থবির ছিল। বর্তমানে প্রতিজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার তেল, দুই কেজি ডাল এবং এক কেজি চিনি কিনতে পারবেন। পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে—তেল ১১৫ টাকা প্রতি লিটার, ডাল ৭০ টাকা প্রতি কেজি, চিনি ৮০ টাকা প্রতি কেজি।

টিসিবি জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরীতে ৬০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে বিক্রি চলবে। অন্যান্য জেলায়ও ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৬৫ লাখ পরিবারের কাছে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে গেছে, যার মধ্যে ৫৪ লাখ সক্রিয়। ভবিষ্যতে এক কোটি পরিবারের মধ্যে এই কার্ড বিতরণ করা হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এবার মধ্যবিত্তরাও ট্রাকে দাঁড়াচ্ছেন। বাজারের চেয়ে কম দামে পণ্য কিনে কিছুটা অর্থ সাশ্রয় করার চেষ্টা করছেন তারা। তবে ক্রেতার সংখ্যা বরাদ্দের তুলনায় বেশি হওয়ায় অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. শুক্কুর মিয়া বলেন, 'দীর্ঘদিন পরে কার্যক্রম শুরু হওয়ায় লাইনে দাঁড়ালাম। কিন্তু ট্রাকের কাছে এসে শুনলাম পণ্য শেষ হয়ে গেছে। দুই দিন চেষ্টা করেও কিছু পাইনি।' 

খিলক্ষেত বাস স্ট্যান্ডের ডিলার মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি তরিকুল ইসলাম জানান, 'প্রতিদিন ৫০০ জনের মাল আনি, কিন্তু লাইনে ৭০০ জন দাঁড়ায়। ফলে ২০০ জনকে ফেরত দিতে হয়। আমরা কিছু করতে পারি না। মাঝে মাঝে ক্রেতাদের সঙ্গে বিবাদও হয়।' 

টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির বলেন, 'ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি কার্যক্রমে সাড়া ভালো। ডালের দাম বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে ৫ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে দাম কমিয়ে আবারও বিক্রি করা হবে। আমরা কার্যক্রম সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি, যাতে আরও বেশি মানুষ উপকৃত হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'রাজধানীর কালশী, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী ও রামপুরায় লাইনে ক্রেতাদের চাপের কারণে ট্রাকের কর্মীরা কখনও কখনও মারধরের শিকার হয়েছেন। অনির্ধারিত ক্রেতার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন।'

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে টিসিবির পণ্যের সরবরাহ ও ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরি। সরকারের উচিত বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে কঠোর নজর রাখা এবং সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া। 

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, 'টিসিবির কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে। আশা করি ভবিষ্যতে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, যা বাজারে প্রভাব ফেলবে এবং সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন