চট্টগ্রাম ক্লাব থেকে সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদকে মৃত উদ্ধার
প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
![]() |
সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ | ছবি: সংগৃহীত |
চট্টগ্রাম ক্লাবের আবাসিক কক্ষ থেকে সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশীদ বীর প্রতীকের মরদেহ পাওয়া গেছে। হারুন-অর-রশীদ ছিলেন ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেসটিনি মাল্টি পারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, শহীদুল ইসলাম বলেন, 'আজকের মামলার হাজিরায় সবাই কোর্টে উপস্থিত ছিলাম।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরও উনি আসছিলেন না। ফোন করেও পাওয়া যাচ্ছিল না।
এরপর গেস্ট হাউজ কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা ঘরে প্রবেশ করে দেখতে পান তিনি
অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন। পরে সিএমএএইচের চিকিৎসকরা এসে পরীক্ষা করেন এবং
তাকে মৃত ঘোষণা করেন।'
৭৭ বছর বয়সী হারুন-অর-রশীদ ২০০০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০২ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রোববার বিকালে তিনি চট্টগ্রামে হাজিরা দিতে আসেন একটি অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির মামলায়। তিনি চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউজের ৩০৮ নম্বর কক্ষে উঠেছিলেন।
চট্টগ্রাম ক্লাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন বলেন, 'সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদ ক্লাবের গেস্টহাউসের একটি কক্ষে একা ছিলেন। অনেক বেলা পর্যন্ত তিনি কক্ষ থেকে বের না হওয়ায় ক্লাবের লোকজন বিচলিত হন। দুপুর ১২টার পর পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে কক্ষের তালা খুলে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'চিকিৎসকদের ধারণা কক্ষের মধ্যে রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।'
ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনও ঘটনাস্থলে এসে সাংবাদিকদের বলেন, 'আগেও আমরা এই মামলায় হাজিরা দিতে চট্টগ্রামে এসেছি। গতকাল তার ফ্লাইটও বুক করা ছিল। আজ আমরা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটল, যা আমরা ভাবতে পারিনি।'
চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, 'রাতের সময় তিনি ক্লাবের
গেস্ট হাউজে ছিলেন। খবর পেয়ে আমরা সেখানে পৌঁছেছি। কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা
পরবর্তী তদন্তে জানা যাবে।'
হারুন-অর-রশীদ ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সময় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব দেন।
২০০০ সালের ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশের সেনাপ্রধান হন এবং ২০০২ সালের জুনে অবসর গ্রহণের পর তিনি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজির রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৬ সালে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাবেক মহাসচিব হারুন-অর-রশিদ ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে ব্যবসায়িক ক্ষেত্র বাড়িয়ে তোলেন।
তবে জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগে ২০১২ সালে তাকে কারাগারে যেতে হয়। পরে স্বাস্থ্যগত কারণে জামিনে মুক্তি পান। ২০২২ সালের ১২ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
হারুন-অর-রশীদ ছিলেন সাবেক সেনাশাসক এইচ এম এরশাদের পর প্রথম সেনাপ্রধান, যিনি কোনো মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে গিয়েছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন