প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের এক শিক্ষকের কক্ষে এক ছাত্রী আটকের ঘটনায় সমন্বয়ক, সাংবাদিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে তিন লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শনিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলা চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে এবং গতকাল শুক্রবার নগরের মতিহার থানায় লিখিত অভিযোগে এ দাবি করেন ওই ছাত্রী।

অন্যদিকে একই জায়গায় আজ দুপুর ১২টায় পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত দুই সাংবাদিক।

অভিযোগকারী ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মো. আতাউল্লাহ, বিশ্ববিদ্যালয়ের খবরের কাগজের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম ওরফে সুমন এবং কালবেলার প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন ওরফে সজীব।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১১ মে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. হেদায়েত উল্লাহর কক্ষে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে ছাত্রীকে আটক করেন অভিযুক্তরা। ১৪ মে ওই ঘটনার একটি ৭ সেকেন্ডের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টির নিন্দা জানিয়ে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন এবং দুজনের শাস্তির দাবি জানান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিভাগের একাডেমিক কমিটি তদন্ত চলাকালে ওই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই দিন বিকেলে তিন লাখ টাকা চাঁদা আদায়সহ হেনস্তা করার অভিযোগ তুলে নগরের মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ওই ছাত্রী।

আজ সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি একটা টিউটোরিয়াল পরীক্ষার কিছু পড়াশোনা বুঝে নেওয়ার জন্য গত ১১ তারিখ বিকেলে স্যারের কক্ষে যাই। স্যারের কক্ষে প্রবেশ করার কিছু সময় পরেই ওনারা চারজন স্যারের কক্ষে প্রবেশ করেই আমার গায়ে হাত তোলে এবং শরীর থেকে ওড়না পড়ে যায়। এতে আমি বিব্রত হয়ে পড়ি এবং টেবিলের আড়ালে লুকিয়ে পড়ি। তবু তারা আমাকে হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়।’

চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় তাদের (কক্ষে প্রবেশ করা চারজন) হুমকিতে স্যার তাদের জিজ্ঞাসা করে “বসো আমরা আলোচনা করি”। তখন তারা এই ঘটনা আড়াল করতে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। তবে স্যার এত টাকা একসঙ্গে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা হুমকি-ধমকি চালিয়ে যায়। একপর্যায়ে ওই দিন রাতেই স্যার তাদেরকে এক লাখ টাকা এটিএম বুথ থেকে তুলে এবং নিজের মানিব্যাগ থেকে আড়াই হাজার টাকা দেন। এর পরদিন সুমন এবং সাকিব এসে আরও দুই লাখ টাকা নেয়। এ ঘটনায় ১৮ মে তাদের আরও দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল।’
জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানিয়ে ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘এতগুলো টাকা নেওয়ার পরেও বিকৃতভাবে আমার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সকল ঘটনায় আমি একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছি। তবে সে জায়গা থেকে ফিরে এসে আমি আইনের আশ্রয় নিতে থানায় একটি অভিযোগ করেছি। এ ঘটনায় জড়িত সবার আমি বিচার চাই।’

জানতে চাইলে ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমি গত কয়েক দিন যাবৎ শুনেছি, কোনো একজন শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। তবে একাডেমিক ব্যস্ততা থাকায় আমি বিষয়টির খোঁজ নিতে পারিনি। সেদিন ওই শিক্ষার্থী আমার কাছে পড়া বুঝতে আসলে হঠাৎ তারা চারজন আমার চেম্বারে ঢুকে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ঘটনা আড়াল করতে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ইতোমধ্যে আমার থেকে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা আমার এবং ওই নারী শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’

চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ সম্মেলনে তাঁদের অবস্থান তুলে ধরেছেন দুই সাংবাদিক। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের মতো গুরুতর গুজব ছড়ানো হয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের সঙ্গে ওই শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়নি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল কেবলমাত্র একটি অনৈতিক ঘটনার যথাযথ প্রতিবাদ ও প্রশাসনকে অবহিত করা।’

ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব জানান, সার্বিক বিষয়ে বিভাগে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। সেই কমিটি এবং পুলিশ প্রশাসন ঘটনাটি খতিয়ে দেখবে।