[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বন্যা পরিস্থিতি: প্রত্যন্ত এলাকায় যাচ্ছে না ত্রাণ

প্রকাশঃ
অ+ অ-

সড়কটি পাঁচ দিন ধরে জলমগ্ন। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরসমান। আশপাশের বিপণিবিতান, হাসপাতাল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিচতলা পানিতে ডুবে আছে। দুর্ভোগে মানুষ। গতকাল বেলা দুইটায় ফেনী শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেনীসহ বন্যাকবলিত বেশির ভাগ এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নোয়াখালীসহ দু–একটি স্থানে পানি বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। সেসব স্থানে পরিস্থিতি খানিকটা অবনতির দিকে। বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি না সরায় অনেকে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রেই আছেন।

বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে শুকনা খাবার, পানি, ওষুধপত্র বিতরণ অব্যাহত আছে। তবে প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় অনেকে ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। চার দিন পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল গতকাল দুপুর থেকে শুরু হয়েছে। তবে গতি ছিল কম।

বন্যায় এখনো দেশের ১১টি জেলায় ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দী। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮। সরকারি হিসাবে, এখন পর্যন্ত ২০ জনের মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৬ জন, চট্টগ্রামে ৫, নোয়াখালীতে ৩, কক্সবাজারে ৩ এবং ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে একজন করে মারা গেছেন। মৌলভীবাজারে নিখোঁজ আছেন দুজন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে গতকাল সন্ধ্যায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পানিবন্দী মানুষদের আশ্রয়ের জন্য ৩ হাজার ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় ১১ জেলায় ৭৪৮টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে
ফেনী শহরে, পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ায় পানি কমছে। তবে ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞাতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেশি। গতকাল সন্ধ্যায় ফেনী জেলা প্রশাসন এসব তথ্য জানিয়েছে।

ফেনী শহরে তিন দিন পর কয়েকটি সড়ক থেকে পানি নেমেছে। শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা ওমর বিন হোসাইন জানান, গত শুক্রবার তাঁর বাসার একতলা পানিতে নিমজ্জিত ছিল, গতকাল সকালে পানি সরে গেছে।

বিশুদ্ধ পানির খোঁজে শহরের ট্রাঙ্ক রোডে আসা একাডেমি এলাকার বাসিন্দা হারুন রশিদ জানান, গত দুই দিন সেখানে কয়েক ফুট উচ্চতার বেশি বন্যার পানি প্রবাহিত হয়েছে। এখন কমে নিচতলায় হাঁটুপানি রয়েছে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজানের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে নতুন দুশ্চিন্তা বেড়েছে বিধ্বস্ত কাঁচাঘরের বাসিন্দাদের। পানি কমতে থাকায় সড়ক ও কাঁচা বাড়িঘরের ক্ষত ভেসে উঠছে। ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বন্যা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারলেও মানুষ এখন আবাসস্থল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বেশির ভাগ কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গ্রামীণ ও আঞ্চলিক মহাসড়কও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

কক্সবাজারের প্রধান দুটি নদী বাঁকখালী ও মাতামুহুরীর পানি নামতে নামছে বঙ্গোপসাগরে। এতে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ছয়টি উপজেলা রামু, ঈদগাঁও, সদর, চকরিয়া ও পেকুয়ার ঘরে ঘরে খাবার ও পানীয়জলের সংকট চলছে। বন্যার পানিতে ডুবে আছে ৪৫ হাজারের মতো ঘরবাড়ি।

খাগড়াছড়িতে বন্যার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজন ঘরে ফিরলেও বন্যার দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকট। যোগাযোগের সুবিধা না থাকায় ত্রাণ পাচ্ছে না দুর্গম এলাকার লোকজন। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, সরকারি, বেসরকারি, বিভিন্ন সংগঠন বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনদের ত্রাণ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। তারপরও দুর্গম এলাকায় এখনো সংকট রয়েছে।

নির্মাণসামগ্রীও প্রয়োজন
কুমিল্লা দক্ষিণের চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে বন্যার তীব্রতা বেড়েছে। আক্রান্ত এলাকাগুলোয় এখন সরকারি বা বেসরকারি উদ্যাগে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি। এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী লাখো মানুষ ত্রাণের অপেক্ষায় আছেন। আক্রান্ত এলাকার বাজারে ফুরিয়ে আসছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। বেশির ভাগ হাটবাজার পানির নিচে। আর উঁচু জায়গার বাজারগুলোয় কয়েক দিন ধরে শুকনা খাবারের চাহিদা বেড়ে গেছে। এতে টান পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল, ডাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ, রসুনসহ প্রায় সব পণ্যে। এ ছাড়া জরুরি ওষুধের সংকটও দেখা দিয়েছে।

নাঙ্গলকোটের করপাতি গ্রামের জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎ নেই। বিশুদ্ধ পানি নেই। বাজারে খাবার নেই। আমরা খুব কষ্টে আছি। আমাদের বাঁচান।’

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু মুশফিকুর রহমান জানান, জেলার ১৪টি উপজেলায় খোঁজে খোঁজে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। তিনি অনুরোধ করেন, ‘যে যেখানে পানিবন্দী মানুষের খবর পাবেন, তিনি যেন তথ্য দিয়ে জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেন।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বায়েক ইউনিয়নের কৈখলা, জয়দেবপুর, নয়নপুর, শ্যামপুর, খাদলা, অষ্টজঙ্গল ও বায়েক গ্রামের সড়ক এবং এসব গ্রামের বাসিন্দাদের বসতঘর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। কৈখলা গ্রামের বাসিন্দা দুই ভাই শরীফ মিয়া ও আবুল কালাম, তাঁদের বোন লুৎফা বেগমের মাটির ঘর ঢলের পানিতে ধসে পড়েছে। আর কাঠের ঘরটিও হেলে পড়েছে। তাঁরা প্রতিবেশী শামসুল আলমের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। শামসুল আলম বলেন, তাঁদের তিন ভাইবোনের পরিবারের দুটি মাটির ঘর ধসে পড়েছে। বোনের কাঠের ঘরটি হেলে পড়েছে। তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য টিনের পাশাপাশি অর্থসহায়তা প্রয়োজন।

নতুন করে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় নোয়াখালীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত শনিবার দিনে বৃষ্টি না হওয়ায় কিছু এলাকার বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও রাতের বৃষ্টিতে সেটি আবার বেড়ে গেছে। গতকাল সকাল থেকেও জেলার সর্বত্র হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বন্যার্ত মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।

নোয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান খান বলেন, যেসব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়নি, সেগুলোর তালিকা নেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। তালিকা হাতে পাওয়ার পরপরই সব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

সড়কে ধীরগতি, রেলপথ অচল
সড়কের ওপর থেকে পানি নেমে যাওয়ার চার দিন পর অবশেষে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে মহাসড়কের দু পাশে যানবাহন চলেছে। তবে গতি ছিল কম। বেলা সাড়ে ৪টায় কনটেইনারবাহী লরির চালক মো. সোহেল ফেনীর মহিপালে  বলেন, তিনি ঢাকা থেকে তিন দিন আগে রওনা দিয়েছিলেন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুদিন আটকে ছিলেন।

ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী—এ ছয় উপজেলা পুরোপুরি বন্যাকবলিত। গ্রামের পর গ্রাম ডুবে আছে। মহাসড়কের লালপোল এলাকায় পানির প্রবল স্রোত বয়ে যাচ্ছে। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও বুকসমান।

বন্যা পরিস্থিতির কারণে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার সঙ্গে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। রেললাইন ডুবে থাকায় কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হবে, তা-ও নিশ্চিত নন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে নদ-নদীর পানি ক্রমাগত কমতে থাকায় মৌলভীবাজারে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। জেলার প্রধান নদ-নদীর মধ্যে মনু ও ধলাই নদ এবং কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। হবিগঞ্জে খোয়াই নদের পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এলেও জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত কুশিয়ারা ও কালনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে এখনো প্রবাহিত হচ্ছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন