{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান শাস্তি না হলে প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগের হুঁশিয়ারি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | ফাইল ছবি

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বাধার কারণে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষরা। অনেক সময় তাঁরা হেনস্থার শিকারও হচ্ছেন। দুই প্রাধ্যক্ষকে লাল কালির ক্রস দাগসংবলিত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে একসঙ্গে প্রাধ্যক্ষরা পদত্যাগ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এক জরুরি সভা হয়। সভায় বিভিন্ন হল প্রাধ্যক্ষরা এমন হুঁশিয়ারি দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত সভায় সহ–উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম (প্রশাসন), সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) হুমায়ুন কবির, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার তারিকুল হাসান, ছাত্র-উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম সাউদ ও প্রক্টর আসাবুল হক উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ও নবাব আবদুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ এ এইচ এম মাহবুবুর রহমানসহ বাকি ১৬ হলের প্রাধ্যক্ষ।

সভা শেষে একাধিক প্রাধ্যক্ষ জানান, সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ধারাবাহিক প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রাধ্যক্ষরা বলেন, যেসব বিষয় পত্রিকায় এসেছে, তা পুরোপুরি সত্য। এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। গতকাল সোমবার নবাব আবদুল লতিফ হলে ভাঙচুরের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সভায় প্রাধ্যক্ষরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রলীগের বিশৃঙ্খল আচরণে তাঁরা অতিষ্ঠ। এভাবে তাঁরা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এবার দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না নিলে তাঁরা একযোগে পদত্যাগ করবেন।

হল পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বলেন, দুজন সহ–উপাচার্যের সঙ্গে আজ সভা হয়েছে। সেখানে রেজিস্ট্রার, ছাত্র-উপদেষ্টা, প্রক্টরসহ সবাই ছিলেন। সেখানে সমস্যাগুলো বলেছেন, কর্তৃপক্ষ নোট নিয়েছে। পরে তারা এই বিষয় নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বসবেন। এভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
পদত্যাগের বিষয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পদত্যাগ করবেন। তখন দেখা গেল তিনি করলে সবাই পদত্যাগ করবেন। এখন দেখা যাক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদের জন্য কী করে, তা দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেবেন।

মাহবুবুর আরও বলেন, ‘আমার হলের কক্ষ এখনো তালাবদ্ধ। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। এর প্রতিবাদে আজ হলে কর্মবিরতি চলছে। আমরা এখানে থাকি পরিবার নিয়ে। আমরা অসহায় বোধ করছি; নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এখন দেখি, প্রশাসন কী করে? তারা কিছু না করতে পারলে নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

সহ–উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম বলেন, তাঁরা সভায় প্রাধ্যক্ষদের সব বিষয় শুনেছেন। শুধু সোমবারের লতিফ হলের ঘটনা নয়, আগে–পরে যতগুলো বিষয় আছে, সবই প্রাধ্যক্ষরা বলেছেন। যেহেতু একটি ছাত্রসংগঠনের নাম এসেছে, তাই আজ বিকেলে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গেও বসা হবে। পরে বিষয়গুলো বিস্তারিত তাঁরা উপাচার্যকে জানাবেন। বিষয়গুলো শৃঙ্খলা কমিটিতে তোলা হবে।

লতিফ হলের ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
নবাব আবদুল লতিফ হলে ভাঙচুরের ঘটনায় হল প্রশাসন থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক অনীক কৃষ্ণ কর্মকারকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল কাদের, মেজবাউল সালেহীন ও হল সুপারভাইজার ইলিয়াস হোসেন। তাঁদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

গতকাল নবাব আবদুল লতিফ হলে বেলা দেড়টার দিকে এক ছাত্রলীগকর্মী খাবারে সিগারেটের টুকরা পান বলে অভিযোগ করেন। এরপর হলগেটে তালা লাগিয়ে প্রাধ্যক্ষের কক্ষও তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের নেমপ্লেট এবং তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া হলের একটি সিসিটিভি ক্যামেরা, একটি ঘড়ি, নোটিশ বোর্ড ও গেস্টরুম ভাঙচুর করা হয়। দুপুরে গিয়ে প্রাধ্যক্ষ হলে প্রবেশ করতে পারেনি। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদসহ একজন সহকারী প্রক্টর আসেন। এ সময় তাঁদেরও হলের মধ্যে আটকে দেওয়া হয়। পরে বেলা তিনটার দিকে হলগেটের তালা খুলে দেওয়া হয়।

হল প্রাধ্যক্ষ এ এইচ এম মাহবুবুর রহমানের অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেতাদের ২০টি জার্সি না দেওয়ায় তাঁরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আন্দোলন করে হলে ভাঙচুর চালিয়েছেন। এ ঘটনায় গতকাল রাতেই এক জরুরি সভায় প্রাধ্যক্ষ পরিষদ ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন