{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

পুলিশের ভুলে কলেজছাত্র কারাগারে, শাস্তি চেয়ে লিখিত আবেদন পরিবারের

প্রকাশঃ
অ+ অ-

কারাগার | প্রতীকী ছবি

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীতে পুলিশের ভুলে কারাগারে যাওয়া কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনকে শেষ পর্যন্ত মাদক মামলার আসামি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল বলে পরিবার অভিযোগ তুলেছে। এমনকি আসল আসামির ছবির জায়গায় ওই কলেজছাত্রের ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছিল।

আজ বুধবার রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনিসুর রহমান ও রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমানের কাছে লিখিত আবেদন করে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি চেয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।

এর আগে গত রোববার (১২ মে) রাতে পরোয়ানা দেখিয়ে কলেজছাত্র ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন সোমবার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সে মুক্ত হয়।

কলেজছাত্র ইসমাইল গোদাগাড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফাজিলপুর গ্রামের আবদুল করিম ও মোসা. মনোয়ারা বেগম দম্পতির ছেলে। সে গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র।

অপর দিকে, মাদক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামির নামও ইসমাইল হোসেন (২০)। তাঁর বাবার নামও আবদুল করিম। তবে তাঁর মায়ের নাম মোসা. বেলিয়ারা। তাঁদের বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাগ হেলিপ্যাড গ্রামে। আসামি ইসমাইল পেশায় কাঠমিস্ত্রি। মাদক মামলায় আসামি হয়ে জেল খাটার পর তিনি জামিন নিয়ে বর্তমানে ভারতের চেন্নাইয়ে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি তাঁর বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন।

ভুক্তভোগী কলেজছাত্রের বড় ভাই আবদুল হাকিম লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, রোববার রাতে গোদাগাড়ী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান ওয়ারেন্ট আছে বলে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যান তাঁর ছোট ভাইকে। তাঁরা সবাই পুলিশকে বলেন যে ইসমাইল কোনো মামলার আসামি নন। পরে স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে থানায় গিয়েও তাঁরা বোঝাতে থাকেন। কিন্তু পুলিশ কোনো যাচাই না করে পরদিন আদালতের মাধ্যমে ইসমাইলকে কারাগারে পাঠায়। পরে আদালতে গিয়ে মামলার নকল কপি তুলে জানতে পারেন যে তাঁর ভাইকে ২০২৩ সালের আগস্টের একটি মাদক মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে। পরে তাঁরা আসল আসামির খোঁজ পান। ইমো অ্যাপে সেই আসল আসামির সঙ্গে কথা বলে তথ্য নিয়ে পুলিশকে জানালেও কোনো কাজে আসে না। বরং তাঁর ভাইকেই মাদক মামলার আসামি হিসেবে জাহির করে। গ্রেপ্তারের রাতেই মামলার আসল আসামির ছবি সরিয়ে তাঁর ভাইয়ের ছবি ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিডিএমএস) নতুনভাবে যুক্ত করে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে এটাই আসল আসামি। পরে তিনি গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল রানার শরণাপন্ন হন। পরে কোর্ট ইন্সপেক্টরকে তাঁরা বিষয়টি বোঝান। পরে গতকাল আদালত মুক্তি দেন তাঁর ভাইকে।

অভিযোগে আবদুল হাকিম আরও উল্লেখ করেছেন, এর আগে ২০২১ সালে একটি পারিবারিক মামলা হলে এসআই আতিকুর রহমান ও এসআই মামুন অপর পক্ষের হয়ে তাঁদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার ও গালিগালাজ করেন। তখন তাঁরা দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দেন। তখন ওই দুই এসআই আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যান। পরে যেকোনোভাবে তাঁদের মামলা দিয়ে ফাঁসানো ও ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। গত সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে তাঁর বাবাকে নাশকতা মামলায় চালান দিয়েছিলেন তাঁরা। অথচ তাঁর বাবা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন ও এসআই আতিকুর রহমানের জন্যই তাঁর ভাইকে বিনা দোষে কারাবরণ করতে হলো। তাঁর ছাত্রজীবনে একটি কালো অধ্যায় রচিত হলো। পরে আরও কোনোভাবে হয়রানি ও বিপদে ফেলবে থানা-পুলিশ, এই হুমকি লোকমুখেও শুনতে পাচ্ছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে থানা-পুলিশের ইচ্ছাকৃত এমন হয়রানির শিকার যাতে আর কোনো পরিবার না হয়, এ জন্য জড়িত পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তি চান তাঁরা।

এ ব্যাপারে কথা হলে আবদুল হাকিম বলেন, তাঁর বাবাকেও গত বছর ২৯ অক্টোবর এসআই আতিকুর ডেকে নিয়ে গিয়ে গ্রেপ্তার করেন। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দেওয়ার কারণেই এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাঁরা এর বিচার চান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই আতিকুর রহমান বলেন, তাঁদের সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। কারাগারে যাওয়ার পর বিষয়টি সামনে আসে। পরে দ্রুত তাঁরা সমাধান করেছেন।

রাজশাহী পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান বলেন, তিনি এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগের কপি পাননি। পেলে এ বিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন। পুলিশ সুপার আরও বলেন, এটা ছিল মাদক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। কিন্তু পরোয়ানায় ধারা ভুল ছিল। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছেও আলাপ করে একজনই ইসমাইল পাওয়া যায়। আর আসল আসামি ওই এলাকায় নতুন। সেভাবে তাঁকে কেউ চেনেনও না। সব মিলিয়ে বিষয়টি ঘটে গেছে। তবে কারও দায়িত্বে অবহেলা থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন