[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

হাদির জন্য শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক

প্রকাশঃ
অ+ অ-
রাষ্ট্রীয় শোক 

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে।

ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক একটি সংবাদ নিয়ে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি আর আমাদের মাঝে নেই। কিছুক্ষণ আগে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান আমাকে টেলিফোনে এই হৃদয়বিদারক সংবাদটি জানিয়েছেন।’

ইউনূস বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের এই অমর সৈনিককে মহান রাব্বুল আলামিন শহীদ হিসেবে কবুল করুন—এই দোয়া করি।’

ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তার প্রয়াণ দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিসরে এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত স্ত্রী, পরিবারের সদস্যবৃন্দ, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’

প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, ‘শহীদ ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে। শহীদ শরীফ ওসমান হাদির অকাল মৃত্যুতে আগামী শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছি। এ উপলক্ষে শনিবার দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একই সঙ্গে আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা দেশের প্রতিটি মসজিদে শহীদ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন থাকবে।’ 

হাদির চিকিৎসায় সহযোগিতা করায় সিঙ্গাপুর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান, যিনি একই সঙ্গে একজন চিকিৎসকও। তিনি নিজে হাদির পরিচর্যা করেছেন এবং আমাকে নিয়মিত চিকিৎসা সম্পর্কে খোঁজখবর দিয়েছেন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো হবে না। আমি দেশের সকল নাগরিকের প্রতি আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি—আপনারা ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পেশাদারত্বের সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাষ্ট্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি আবারও স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ওসমান হাদি ছিলেন পরাজিত শক্তি ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের শত্রু। তার কণ্ঠ স্তব্ধ করে বিপ্লবীদের ভয় দেখানোর অপচেষ্টা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ করে দেওয়া হবে। ভয়, সন্ত্রাস কিংবা রক্তপাতের মাধ্যমে এ দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।আমরা এখন গণতান্ত্রিক উত্তরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছি। শহীদ হাদি ছিলেন এই প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার একান্ত ইচ্ছা ছিল আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরবর্তী ধাপে সক্রিয় ভূমিকা রাখা।’

তিনি আরও বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, তার এই মহতী ইচ্ছা অপূর্ণ রয়ে গেল। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায় আজ সমগ্র জাতির কাঁধে ন্যস্ত। আগামী দিনগুলোতে আমাদের সবাইকে ধৈর্য, সংযম, সাহস ও দূরদর্শিতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে, যাতে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের শত্রু ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী অপশক্তিকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা যায়। এই শোকের মুহূর্তে আসুন, আমরা শহীদ শরীফ ওসমান হাদির আদর্শ ও ত্যাগকে শক্তিতে পরিণত করি। ধৈর্য ধারণ করি, অপপ্রচার ও গুজবে কান না দিই এবং যে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকি। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের ফাঁদে পা না দিয়ে আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে অবিচল পদক্ষেপে এগিয়ে যাই। এটাই হবে শহীদ হাদির প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।’

জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গেলে তিনি হামলার শিকার হন।

চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা এক আততায়ী গুলি করে। গুলিটি হাদির মাথায় লাগে।

গুরুতর আহত অবস্থায় হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে তার মৃত্যুর খবর আসে।

এই খবরে ঢাকার শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর রাত সোয়া ১১টার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। 

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন