[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

জুলাই জাতীয় সনদ: আদেশ জারি হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে

প্রকাশঃ
অ+ অ-
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস | ছবি: সংগৃহীত

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে আলাদা কোনো অধ্যাদেশ জারির বাধ্যবাধকতা নেই। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে আদেশ জারি করতে পারেন বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, অধ্যাদেশ জারির ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে।

সংসদ কার্যকর না থাকায় এখন অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে এই অধ্যাদেশ জারির পক্ষপাতী নয়। তাই প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমেই আদেশ জারি করার পথে এগোচ্ছে সরকার, জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

তবে বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। দলটির মতে, জুলাই সনদ নিয়ে রাষ্ট্রপতি যদি অধ্যাদেশ জারি করেন, তাহলে সেটির ওপর গণভোট হওয়া উচিত।

সূত্র বলছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ কীভাবে জারি করা যায়, সেটি আইনি কাঠামোর ভেতর থেকেই খুঁজে দেখছে সরকার। গণ-অভ্যুত্থানের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে জনগণের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে এ পথ বের করার চেষ্টা চলছে।

জুলাই সনদের খসড়ায় আগে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত সনদে এই অংশ বাদ দিয়ে বলা হয়েছে—গণ-অভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এর মধ্য দিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে জনগণের ইচ্ছা হিসেবে ধরা হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করা জরুরি। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের ক্ষমতা ও ইচ্ছার ভিত্তিতেই এই আদেশ জারির সুপারিশ করেছে তারা।

সরকারের সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সাড়া না পেয়ে সরকার এখন খুঁজছে কীভাবে আদেশটি জারি করা যায়। আইনি বাধা না থাকলে প্রধান উপদেষ্টা নিজেই আদেশ জারি করবেন। তবে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আদেশটি জারি করা যায় কি না, তাও ভাবা হচ্ছে। সরকার চাইছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে যেন নতুন কোনো রাজনৈতিক বিভেদ তৈরি না হয়।

গত ২৭ অক্টোবর সরকারকে এই বিষয়ে সুপারিশ দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তারা ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ নামে আদেশ জারির প্রস্তাব দেয়। এতে বলা হয়, আদেশে সংবিধান-সংক্রান্ত অংশগুলো গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদন এবং পরবর্তী সংসদে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাবের মধ্যে ৪৭টি সংবিধান-সম্পর্কিত।

এ ছাড়া কমিশন দুটি বিকল্প প্রস্তাবও দিয়েছে। প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গণভোটে অনুমোদন পেলে সংসদের প্রথম অধিবেশন থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার শেষ করতে হবে, না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে এই ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তবে সেটিও ২৭০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির পথ সংবিধানে স্পষ্টভাবে নেই। এটি কোনো অধ্যাদেশ নয়, আবার সংসদে পাস হওয়া আইনও নয়।

ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক বলেন, বর্তমান সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের জন্য নির্দিষ্ট আইনি ভিত্তি নেই। যেহেতু বর্তমান সরকার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এসেছে, তাই এই আদেশ জারি করা অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ারেই পড়ে। সরকার চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বা রাষ্ট্রপতি—যে কারও মাধ্যমে জারি করতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য এই আদেশ জারি জরুরি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের প্রতীক হিসেবে প্রধান উপদেষ্টাই বেশি উপযুক্ত, তাই তিনি এ আদেশ জারি করতে পারেন। এতে আইনি জটিলতা নেই, কারণ এটি কোনো অধ্যাদেশ নয়।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন