[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ভোটের আগে চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে ইসি, ঘড়ির কাঁটা এখন নির্বাচনের পথে

প্রকাশঃ
অ+ অ-
নির্বাচন কমিশন ভবন

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি মাসের মধ্যেই সব প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ করে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।

তবে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি নেয়নি ইসি। এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে সংস্থাটি।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, গণভোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন হোক বা আলাদা সময়ে—এই আয়োজনের জন্য তাঁদের বাড়তি কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারের নির্দেশনা পেলেই সেই প্রস্তুতি শুরু করা হবে।

গণভোটের সময় এখনো নির্ধারিত হয়নি। সরকার আগেই জানিয়েছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসি সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট আয়োজনের লক্ষ্য ধরে কাজ চলছে। গণভোট নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, কমিশন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকায় গণভোটের সময় নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চায় না ইসি।

আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে ইসি। তাঁরা ভোট দেবেন পোস্টাল ব্যালটে। এ ক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার জন্য আগে প্রবাসী ভোটারদের ইসির নির্দিষ্ট অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। ১৮ নভেম্বর এই অ্যাপ উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বড় পরিসরের প্রস্তুতির মধ্যে আছে—ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি, সংসদীয় আসনের সীমানা ঠিক করা, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার অনুমোদন দেওয়া। এসবের অনেক কাজ তফসিল ঘোষণার আগেই শেষ করতে হয়। এখন বেশির ভাগ প্রস্তুতি শেষের পথে।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটার তালিকার কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। খসড়া তালিকা অনুযায়ী এবার ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮৪ জন। আগামী ১৮ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পরিকল্পনা আছে।

আগামী নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ভোট দিতে পারবেন। তাঁরা ডাকযোগে (পোস্টাল ব্যালট) ভোট দেবেন। এজন্য আগে ইসির নির্দিষ্ট অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। এই অ্যাপ উদ্বোধন করা হবে ১৮ নভেম্বর।

ইতিমধ্যে ৩০০ আসনের সীমানা ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন। কয়েকটি আসনের সীমানা নিয়ে আদালতে রিট হয়েছে। কমিশন আশা করছে, চলতি মাসেই এসব নিষ্পত্তি হবে।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের কেনাকাটার কাজও প্রায় শেষ। এখন প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলছে, এরপর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচন কর্মকর্তা প্যানেল তৈরির কাজও এগোচ্ছে। কর্মকর্তাদের চূড়ান্ত করা ও তাঁদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে তফসিল ঘোষণার পর।

এনসিপিসহ তিনটি দলকে এবার নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। তিনটি দলের বিষয়ে দাবি–আপত্তি থাকলে সেগুলো ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দেওয়া যাবে। এরপর নিবন্ধন চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া প্রথম পর্যায়ে ৬৬টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।

এবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষভাবে ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেছে কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর আরও বৈঠক হবে। ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরকারও প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে।

নির্বাচন ঘিরে আইন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল ইসি। জাতীয় নির্বাচন–সংক্রান্ত প্রধান আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ’সহ (আরপিও) প্রয়োজনীয় আইনগুলো সংশোধন করে সরকার ইতিমধ্যে অধ্যাদেশ জারি করেছে। এত দিন আরপিও সংশোধন না হওয়ায় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি চূড়ান্ত করা যায়নি। তবে খসড়া প্রস্তুত আছে। সরকার ৩ নভেম্বর আরপিও সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি করেছে। দ্রুতই আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ইসির। তবে তা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতীক–সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কাজটি পিছিয়ে যায়। এখন সেই সমস্যা মিটেছে। এনসিপিসহ তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এসব দলের বিষয়ে দাবি–আপত্তি থাকলে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত জানানো যাবে। এরপর নিবন্ধন চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া প্রথম পর্যায়ে ৬৬টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে ইসি। তবে নতুন দলের নিবন্ধন এখনো শেষ না হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু হয়নি। এর বাইরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অক্টোবর পর্যন্ত দলগুলোর আলোচনা চলেছে। ইসি সচিবালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, শিগগিরই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে এবং চলতি মাসের মধ্যেই শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনের জন্য যেসব প্রস্তুতি দরকার, সেগুলো পুরোদমে নেওয়া হচ্ছে।

তবে গণভোট কবে হবে—সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ আছে। বিএনপি চায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হোক। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট চায়।

গণভোট নিয়ে নির্দেশনা পায়নি ইসি
জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গণভোটের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিন একসঙ্গে হবে, নাকি তার আগে—তা স্পষ্ট করে কিছু বলেনি কমিশন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। সরকারও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।

গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ আছে। বিএনপি চায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হোক, আর জামায়াতে ইসলামী চায় জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট হোক।

ইসি সূত্র বলছে, রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকায় গণভোটের সময় নিয়ে কমিশন নিজে থেকে কিছু বলতে চায় না। অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে, তারা সেভাবে প্রস্তুতি নেবে। কবে ভোট হলে কেমন প্রস্তুতি লাগবে, তা নিয়ে কিছু অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে, তবে গণভোটের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি এখনো শুরু হয়নি। বর্তমানে ইসির মূল মনোযোগ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে, যা গণভোটের ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে।

ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেদিনই গণভোট হোক, কিছু বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে খরচ কিছুটা বেশি হবে—বিশেষ করে নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খরচ বাড়বে। আর জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট হলে খরচ তুলনামূলক কম হবে, তবে সেক্ষেত্রেও ইসিকে বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হবে। 

অতিরিক্ত স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে এবং আরও কিছু নির্বাচনী সামগ্রীও প্রয়োজন হবে। তারা গণভোটের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত কী হয়, সেদিকে তাকিয়ে আছে।

কমিশন জাতীয় নির্বাচনের জন্য ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র ও ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ (বুথ) ঠিক করেছে। ইসি সূত্র জানায়, গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হলে ভোটকেন্দ্র না বাড়লেও ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়াতে হবে। কারণ, দুটি ভোট দিতে সময় বেশি লাগবে। ভোটকেন্দ্র বা ভোটকক্ষ বাড়লে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যাও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং আরও কিছু নির্বাচনী সামগ্রী লাগবে। কমিশন এখন গণভোটের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ গত বৃহস্পতিবার বলেন, গণভোটের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এখনো সরকারের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পায়নি।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন