[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

চাকসু নির্বাচন: ছাত্র সংগঠনগুলোতে জোট বেঁধে প্যানেল দেয়ার ভাবনা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

চাকসু ভবন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে জোট বেঁধে প্যানেল দেওয়ার চিন্তা করছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। জোটে সঙ্গী নিতে ভেতরে-ভেতরে আলোচনাও চলছে। তবে ছাত্র অধিকার পরিষদ বলছে, তারা এককভাবে প্যানেল দেবে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। আগামী ১২ অক্টোবর ভোট গ্রহণের দিন ঠিক করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র কেনার সময় ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর। জমার শেষ সময় ১৭ সেপ্টেম্বর। প্রত্যাহার করা যাবে ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। তখনই মূলত বোঝা যাবে, কে কার সঙ্গে যৌথভাবে প্যানেল দিচ্ছে।

সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালে। তখন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেলের বিরুদ্ধে যৌথভাবে প্যানেল ঘোষণা করেছিল ছাত্রদল, ছাত্রলীগসহ ১২টি সংগঠন। নাম ছিল ‘ছাত্র ঐক্য’। ওই বছর ৯৯টি পদের ৮৮টিতে জয়ী হয়েছিলেন ছাত্র ঐক্যের প্রার্থীরা।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ছাড়াও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্র মজলিস, ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব সংগঠনের মধ্যে কে কার সঙ্গে জোট বাঁধবে, কোন প্যানেলে কারা থাকবে—তা নিয়েই এখন আলোচনা বেশি। ছাত্রলীগ এখন নিষিদ্ধ।

সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছাত্রদল, সঙ্গী খুঁজছে ছাত্রশিবির

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মামলা-হামলার মুখে ক্যাম্পাসে ঠিকমতো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি ছাত্রদল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয় ২০২৩ সালের আগস্টে। কমিটিতে পাঁচজন সদস্য আছেন। রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়ার পর ছাত্রদল নিয়মিত ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশের আয়োজন করছে।

চাকসুর নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ করেছে ছাত্রদল। সংগঠনটির সূত্র জানিয়েছে, তারা যৌথভাবে প্যানেল করতে আগ্রহী। তবে এ জন্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মতামতের অপেক্ষায় তারা। ছাত্রদলের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, তাঁদের জোট করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে একত্র হয়ে নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই।

বিগত সরকারের আমলে ২০১৪ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি ছাত্রশিবির। এখন তারা নানা কার্যক্রম করছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ছাত্র হলেই সংগঠনটির কমিটি রয়েছে।

ছাত্রশিবিরের একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী, আহত শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী তাঁরা। মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সময় তাঁরা প্যানেল ঘোষণা করবেন।

ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, তাঁরা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল করতে চান।

বাম সংগঠনগুলো যেদিকে

বিশ্ববিদ্যালয়ে বামধারার ছাত্রসংগঠনগুলো দুই ভাগে বিভক্ত। এর একটি ভাগে রয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ও জনসংহতি সমিতি–সমর্থিত ছাত্রসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। আরেকটি ভাগে রয়েছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। এ পাঁচটি ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ব্যানারে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে এই দুটি পক্ষ আলাদা হয়েই অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, দুটি আন্দোলন ঘিরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের বিরোধ তৈরি হয়েছিল। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামে ছাত্র জোট। আবার বিজয় ২৪ হলের ছাত্রীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতেও আন্দোলন করে তারা। তবে আন্দোলনের প্রক্রিয়া নিয়েই মূলত ছাত্রদলসহ কয়েকটি সংগঠনের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি জশদ জাকির বলেন, ছাত্রদলের সঙ্গে জোট করার কোনো সম্ভাবনা নেই। অনেক শিক্ষার্থী ইতিমধ্যে তাঁদের সঙ্গে জোট করার জন্য যোগাযোগ করেছেন। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে তাঁরা পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি। গত বছরের জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাত ধরে এ সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সংগঠনটি চাকসু নির্বাচন নিয়ে একাধিক কর্মসূচি করেছে। চাকসু নির্বাচনের প্যানেল নিয়ে সংগঠনটি এখন আলোচনায়।

স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্সের সদস্যসচিব আবির বিন জাবেদ বলেন, ‘ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির বাদে যেকোনো সংগঠনের সঙ্গে আমরা জোট করতে পারি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) কমিটি হয়েছে। তারাও প্যানেল গোছাতে কাজ শুরু করেছে। সংগঠনের সদস্যসচিব আল মাসনূন বলেন, ‘যাঁরা ক্যাম্পাসে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে চান, আমরা তাঁদের সঙ্গে বসতে আগ্রহী।’

ছাত্রশিবির ছাড়াও ক্যাম্পাসে চাকসু নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় হয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র মজলিস। ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, আলাপ-আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছালে তাঁরাও জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

একই কথা বলেন ছাত্র মজলিসের সভাপতি সাকিব মাহমুদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কোনো জোট হলে তাঁরা অংশ নেবেন।

জোটে অংশ নিতে না পারলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক রকিবুল ইসলাম।

অন্যদিকে একক প্যানেল দেওয়ার কথা জানিয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সংগঠনের সভাপতি তামজিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা অন্য কোনো প্যানেলে নির্বাচন করব না। ছাত্র অধিকার পরিষদ নামেই নির্বাচনী প্যানেল হবে।’

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন