{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

জাকসু নির্বাচন: সেনা মোতায়েন চায় প্রশাসন, বামপন্থীরা আপত্তি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটিই দেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে সেনা মোতায়েনের জন্য সেনাপ্রধান বরাবর চিঠি দিয়েছে প্রশাসন। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, প্রার্থী ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

অধিকাংশ প্রার্থী ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সেনা মোতায়েন চাওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তবে বামপন্থী সংগঠনগুলো ভিন্নমত জানিয়ে একে প্রশাসনের দুর্বলতা হিসেবে দেখছে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, তাঁরা চান নির্বাচনের দিন সেনাসদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকবেন। প্রয়োজন হলে তাঁরা সহায়তা করবেন।

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাকসু নির্বাচন। গতকাল বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের শেষ দিন ছিল। নির্বাচনের আগের দিন, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরদিন নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনীকে চিঠি দিয়েছে প্রশাসন।

সেনা মোতায়েন চেয়ে চিঠি প্রসঙ্গে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী, প্রার্থীসহ ৩২ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে  প্রতিবেদক। বিষয়টিকে তাঁরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে বামপন্থী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা ভিন্নমত পোষণ করেছেন।

ইতিবাচক বলছে অধিকাংশ সংগঠন
বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মারজুকা মাহি বলেন, দীর্ঘদিন পর জাকসু নির্বাচন ঘিরে তাঁরা আশার আলো দেখছেন। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে সব আশা ভন্ডুল হয়ে যাবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যদি সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটা ইতিবাচক।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নিবিড় ভূঁঞা মনে করেন, সেনা মোতায়েন হলে ভোটের হার বাড়বে। এতে জাঁকজমকপূর্ণ নির্বাচন হবে, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে ভূমিকা রাখবে।

প্রায় একই ধরনের কথা বলছেন ছাত্রদল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস), ইসলামী ছাত্রশিবির, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বাগছাসের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি। কারণ, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মতো আশঙ্কা আছে। সে ক্ষেত্রে প্রশাসন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তা নিলে সেটা ইতিবাচক।

গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ও ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সেনা মোতায়েনের দরকার হলে সেটা প্রশাসন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সেনা মোতায়েনে কোনো আইনকানুন থাকলে সেটাও বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মুহিবুর রহমান বলেন, নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। সেই জায়গা থেকে প্রশাসন নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রশাসন নিরাপত্তা জোরদার করতে সেনা মোতায়েন জরুরি মনে করলে সেটাকে তাঁরা সাধুবাদ জানাচ্ছেন।

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন বলেন, নির্বাচনকালীন ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি ইতিবাচক। এতে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে এবং নির্বাচনে কারসাজি রোধ হবে।

আছে ভিন্নমতও
জাকসু নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রস্তুতি নড়বড়ে বলে অভিযোগ তুলেছেন বামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রশাসনের। তাঁরা সেটা নিশ্চিত না করতে পারলে সেটা তাঁদের ব্যর্থতা।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘প্রশাসন সেনাবাহিনীর কাছে সহযোগিতা চাওয়ার মাধ্যমে স্পষ্ট প্রমাণ করে দিয়েছে যে প্রশাসন হিসেবে তাঁদের যে যোগ্যতা থাকার কথা, সেটাতে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। নির্বাচনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি দরকার—যেখানে প্রতিটি গণতান্ত্রিক শক্তির সহনশীল অবস্থান থাকবে, সেটা যে নেই তাঁরা তা সেনাবাহিনীর কাছে সহযোগিতা চেয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন।’

প্রায় একই কথা বলছেন ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে দায় স্বীকার করে অন্য কারও সহযোগিতা চাইতে পারে।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সোমা ডুমরি বলেন, ‘যেকোনো বিষয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব যেহেতু প্রশাসনের, সেখানে ভোট ইস্যুতে যদি তাদের সেনাবাহিনীর দ্বারস্থ হতে হয়, তাহলে সেটা আমরা বলব, প্রশাসনিক ব্যবস্থার নিরাপত্তার যে সিস্টেম সেটার ব্যর্থতা।’

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের একাংশের মুখপাত্র মাহফুজ ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসন চাইলে পুলিশ নিয়োগ দিতে পারে, যারা প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত হবে। অন্যথায় প্রশাসন যদি মনে করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের সেনাবাহিনীর সাহায্যের প্রয়োজন, তা কেবলই এই প্রশাসনের প্রশাসনিক নির্লিপ্ততা ও অদক্ষতাকেই প্রমাণিত করবে।’

যা বলছে নির্বাচন কমিশন
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে বা সব ক্ষেত্রে মূলত আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। দেশে যেহেতু পুলিশের পাশাপাশি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীও দায়িত্ব পালন করছে, সেহেতু নির্বাচনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। ক্যাম্পাসে হয়তো কয়েকটি পয়েন্টে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। তবে সেটিও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন