প্রতিনিধি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়
![]() |
প্রতীকী ছবি |
দেশের মধ্যে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে পানি আয়রন ও আর্সেনিকমুক্ত। বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া ছাড়াই নিরাপদে তা পানযোগ্য। দেশের সুপেয় পানির সংকট নিরসনে তা বিকল্প মাধ্যম হতে পারে।
সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির গুণমান নিয়ন্ত্রণকারী প্রক্রিয়াসমূহের পরিসংখ্যানভিত্তিক হাইড্রোজিওকেমিক্যাল বিশ্লেষণ’ শিরোনামে আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘অ্যাপ্লায়েড ওয়াটার সায়েন্সে’ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
শাবিপ্রবির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবুল হাসনাতের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষক দলের অন্যরা হলেন ইমরান হোসাইন, মাহফুজ আলম, সৈয়দা তাসনিম ও তাহমিদ এ চৌধুরী।
গবেষণাপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার ভূগর্ভস্থ পানির গুণমান চমৎকার। মাল্টিভেরিয়েট বিশ্লেষণ ও ওয়াটার কোয়ালিটি ইনডেক্স ব্যবহার করে দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশ নমুনা ‘অত্যন্ত চমৎকার’, ৩৪ শতাংশ ‘ভালো’, মাত্র ০.৮৩ শতাংশ নমুনা পানের অযোগ্য। পানিতে কোথাও আর্সেনিক বা ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ২০২৩ সালে গবেষক দলটি ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-দিনাজপুর জেলার ১২০টি স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেছিলে।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লষণে দেখা যায়, ওই অঞ্চলের পানিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত আদর্শ মান পুরোপুরি রয়েছে। পানিতে পিএইচ মান ৬ দশমিক ৫১, আর্সেনিকের পরিমাণ শূন্য, আয়রনের মাত্রাও ৫১ দশমিক ৩ মাইক্রোগ্রাম/ লিটার, নাইট্রেট ৫০ মিলিগ্রাম/ লিটারের নিচে, মোট দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের (টিডিএস) পরিমাণ ৮৭ দশমিক ৩৬ থেকে ১৩৪ দশমিক ৪১ মিলিগ্রাম/ লিটারের মধ্যে, কার্বনের পরিমাণ ২ মিলিগ্রাম/ লিটারের নিচে। শুধু বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার কিছু স্থানে ইউরিয়া সারের ব্যবহারের ফলে নাইট্রেটের পরিমাণ সামান্য বেশি দেখা গেছে।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বিষয়ে গবেষকেরা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চল (নোয়াখালী, খুলনা, পটুয়াখালী) ও উপকূলীয় এলাকায় পানিতে লবণাক্ততা, মধ্যাঞ্চলে (ঢাকা) ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস এবং শিল্পাঞ্চলে বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি বিপজ্জনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, পারদ ও আর্সেনিকদূষণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়ের পানির উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে গবেষক আবুল হাসনাত বলেন, হিমালয়ের কাছে হওয়ায় এখানকার ভূগর্ভে হিমবাহজাত শুদ্ধ পানির প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। দেশে সুপেয় পানির সংকট নিরসনে তা বিকল্প হতে পারে। গবেষক দলের সদস্য ইমরান হোসেন বলেন, এখানকার পানি বোতলজাত করে সারা দেশে কিংবা বিদেশে রপ্তানিও করা যেতে পারে।