প্রতিনিধি রাজশাহী
![]() |
রাজশাহী আদালত চত্বরে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার পর উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ভুক্তভোগী নারী। পাশে নিকাহ রেজিস্ট্রার মোস্তফা হোসেন (নীল শার্ট পরিহিত)। সোমবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কাজির (নিকাহ রেজিস্ট্রার) প্রতারণায় মোহরানার টাকা পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন এক নারী। বিষয়টি নিয়ে আদালত চত্বরে ওই নারী দুই কাজির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে কাজিরা ওই নারীকে প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার আমলি আদালতের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী নারীর বয়স প্রায় ৩৫। বাড়ি রাজশাহী মহানগরে। অভিযুক্ত দুই কাজি হলেন রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোস্তফা হোসেন ওরফে ভিক্টর এবং তাঁর ছোট ভাই একই উপজেলার বাকশিমইল ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোকাদ্দেম হোসেন ওরফে শাওন।
অভিযোগ আছে, দুই ভাই প্রতারক চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভুয়া রেজিস্ট্রার বুকে বিয়ে নিবন্ধন করে দেন। ফলে তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া কাবিননামা দিয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না অনেকে। ওই দুই ভাই মোহনপুর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকলেও রাজশাহীর আদালত চত্বরে ঘোরাফেরা করেন। শহরে নিকাহ রেজিস্ট্রার মোকাদ্দেম হোসেনের ব্যক্তিগত চেম্বারও আছে। সেখানে বিয়ের নামে প্রতারণা করার কারণে গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার মামলা আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আজ দুপুরে আদালত চত্বরে ওই নারীর সঙ্গে নিকাহ রেজিস্ট্রার দুই ভাইয়ের কথা–কাটাকাটি হচ্ছিল। একপর্যায়ে রেগে গিয়ে ওই নারী কাজি নিকাহ রেজিস্ট্রার মোকাদ্দেম হোসেনকে লাথি মারেন। এ সময় মোকাদ্দেম হোসেনও ওই নারীর পেটে লাথি মারেন। বড় ভাই মোস্তফা হোসেন পাশে থাকলেও ছোট ভাই মোকাদ্দেমকে বাধা দেননি। এ সময় ওই নারী উত্তেজিত হয়ে চিৎকার–চেঁচামেচি করতে থাকেন। তখন অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যান। এ সময় সবার সামনে ওই নারীকে অশ্লীল ও অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন নিকাহ রেজিস্ট্রার মোকাদ্দেম হোসেন। পরে পুলিশ এসে তাঁদের সরিয়ে দেয়। দুই পক্ষ দুই দিকে চলে যায়।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করেন, ওই দুই ভাই প্রতারক চক্রের সদস্য। তাঁরা অনেক নারীর সঙ্গে প্রতারণা করেন। সম্প্রতি তাঁর বিয়ে হয়েছিল। বনিবনা না হওয়ায় বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। তিনি দেনমোহরের ৩৮ লাখ টাকা পাবেন। বিষয়টি আপস করার জন্য কাজি দুই ভাই চাপ দিচ্ছেন। আপস করে মোটা অঙ্কের টাকা তাঁরা হাতিয়ে নিতে চান। এতে রাজি না হলে তাঁকে মোকাদ্দেম হোসেন লাথি মারেন। এ বিষয়ে আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান ওই নারী।
যোগাযোগ করা হলে নিকাহ রেজিস্ট্রার মোস্তফা হোসেন বলেন, ‘ওই নারীই প্রথমে আমার ভাইকে লাথি মেরেছে। তারপর আমার ভাই লাথি মেরেছে। তবে এটা ঠিক হয়নি।’ এ বিষয়ে জানতে কাজি মোকাদ্দেম হোসেনকে কয়েক দফায় কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
আদালত চত্বরে প্রকাশ্যে দুই কাজির এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুর রকিব সিদ্দিকী বলেন, এমন ঘটনা তাঁর জানা নেই। ওই নারী যদি অভিযোগ করেন, তাহলে ওই দুই কাজির বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।